প্রথম দর্শনে প্রেম
- Dec 05 2025 16:39
'প্রথম দর্শনে প্রেম': আমি এখন ঢাকা এয়ারপোর্টে। কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বসে আছি। জীবনে প্রথম এয়ার বাসে উঠছি। অবশ্য গতরাতে ইউটিউব ঘেটে কি কি করতে হবে ডমেস্টিক লাউঞ্জে , কিছুটা জানার চেষ্টা করেছি ।আমি যেখানে জয়েন করছি তারাই সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছিল ।যেহেতু আমার বাস জার্নিতে সমস্যা হয় আমার বিশেষ রিকোয়েস্ট তারা এ ব্যবস্থা করেছিলেন।
এর পূর্বে ঢাকার একটা প্রতিষ্ঠানে সেলস কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছিলাম। এডমিন ও সেলস দুটোই দেখতে হতো কিন্তু ঢাকা শহরে চলার জন্য সেলারি যথেষ্ট ছিল না।
কাজের উদ্দেশ্যে সেলস প্রমোশনের জন্য গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ।যতটা মনে আছে, চট্টগ্রামের বড় বড় হসপিটাল, রেডিসন ব্লু ,পেনেনসূলা, চট্টগ্রাম ক্লাব, বড় বড় দুই তিনটা স্বনামধন্য গার্মেন্টসে গিয়েছিলাম ।সাথে ছিল আমার বাসার এক ছোট বোন।
অফিসের বস বলেছিলেন -"ম্যাডাম আপনি একা গিয়ে কক্সবাজার হোটেলে থাকবেন সেটা ক্যামন দেখায় !আপনার কোন বান্ধবীকে সাথে নিয়ে যাবেন, অফিস সব খরচ বহন করবে আর আমিও নিশ্চিতে থাকবো"।
সেদিন অফিসের বসের আমার প্রতি এই মনোযোগ দেখে তার প্রতি সম্মান আমার আরো বেড়ে গিয়েছিল। শিরিন (ছদ্মনাম) কে নিয়ে গেলাম জীবনে প্রথম চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ভ্রমনে।
রাতে ঢাকা থেকে ট্রেনে উঠলাম। ভোরে চট্টগ্রাম গিয়ে পৌঁছলাম ।মিনহাজ সাহেবকে ফোন দিলাম আমি আপনার শহরে ।উনি উনার মাকে ম্যানেজ করে বেরিয়ে এলেন দেখা করতে ।ও মিনহাজ ভাইয়ের পরিচয় দেওয়া দরকার। উনি আমার এক বড় ভাইয়ের ফ্রেন্ড ।উনার সাথে এক সময় আমার বিয়ের প্রস্তাব হয়েছিল কিন্তু দুজনের পরিবার পরিস্থিতি ম্যাচ করেনি বলে আর কথাটা এগোয়নি।
উনি এসে আমাদের নাস্তা করিয়ে কক্সবাজারের গাড়িতে তুলে দিলেন। আগেই বলেছি আমার বাস জার্নিতে সমস্যা। মোশন সিকনেস আছে।
তাই ওরা দুজন আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিল যাই হোক কোন রকম শিরিনের কাঁধে ভর দিয়ে অসুস্থ হয়ে পৌঁছলাম কক্সবাজারে। অফিস থেকে আমাদের হোটেল বুকিং করে রেখেছিল তাই সেখানে চেকিং করতে সমস্যা হলো না।
যতই অসুস্থ থাকি না কেন জীবনে প্রথম সমুদ্র দেখতে যাব ভেবে মনটা উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো ।হোটেলে কোনরকম লাগেজ দুটো রেখেই দুজন ছুটলাম সমুদ্র দর্শনে। সমুদ্রের সামনে গিয়ে তার বিশালতার কাছে নিজেদের খুবই ক্ষুদ্র মনে হচ্ছিল, আর সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির রহস্যের মাহাত্ম্য অনুভব হতে লাগলো। দুচোখ ভরে সমুদ্র দেখছি তাও যেন দেখার সাধ মিটছে না। শিরিন হঠাৎ ডাক দিয়ে বলল- "আপু চলো সমুদ্রে নামি"। সম্বিত ফিরে পেয়ে বললাম চল নামি। আমি সেদিন প্রথম সমুদ্রের পানিতে পা দিতেই এক অদ্ভুত অনুভূতিতে মন পুলকিত হয়ে উঠলো, যেন হাজার বছরের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টিকর্তা আজ পূরণ করতে চলেছেন ।
অজানার প্রতি মানুষের এই অদম্য আকুলতাই হয়তো মানুষকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায় ।তাই ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য হয়তো মানুষ এতটা ব্যাকুল থাকে ।
দুজনে পানিতে নেমে আনন্দের জোয়ারে ভাসছি তা দেখে আশেপাশের দর্শকেরা সহজেই বুঝলো এরা হয়তো প্রথম সমুদ্র স্নানে এসেছে। হঠাৎ ওৎ পেতে থাকা ক্যামেরাম্যানের আগমন -ম্যাম ছবি তুলে দেই মাত্র পাঁচ টাকা পিস ।মোবাইল মেমোরিতে শিফট করে দিতে পারব। নিষেধ করা সত্ত্বেও সে লুকিয়ে ছবি নিল ।হোটেলে যেতে যেতে এসে হাজির -দেখেন কত সুন্দর হয়েছে ছবিগুলো ।বেশি আসে নাই মাত্র ৫০০ টাকা। নিয়ে নেন না স্মৃতি থেকে যাবে। শিরিনের ছেলেমানুষিতে অগত্যা নিতে হলো।
শুধু মজা করলেই তো হবে না। কক্সবাজারে এসেছি অফিসের কাজে। তাই সেটা ভুললে চলবে না ।রাত্রে সুগন্ধা থেকে ডিনার সেরে এসে দুজন মার্কেটিং প্ল্যানটা করে ফেললাম ।আমাদের বিজনেস ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্লিনার থেকে শুরু করে সিইও পর্যন্ত সাপ্লাই দেওয়া ।কক্সবাজারের সব বড় বড় ফাইভ স্টার , ফোর স্টার, থ্রি স্টার হোটেল গুলোতে পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম আমাদের প্রপোজাল নিয়ে ।সবাই খুব ভালোভাবে আমাদের ট্রিট করল এবং দু এক জায়গায় কাজের অফার পেয়ে গেলাম।
পরদিন অফিসের কাজ শেষ করে বস লোকেশন দিলেন আপনারা হিমছড়ি ঘুরে আসেন। আমরা দুপুর নাগাদ পৌঁছে গেলাম হিমছড়ি ।
হিমছড়ির রাস্তা দিয়ে যে একবার গিয়েছে তার সৌন্দর্যটা সে হয়তো জীবনে কখনোই আর ভুলতে পারবেনা ।এক পাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সমুদ্র। রাস্তার দুপাশের ঝাউ গাছগুলো যেন পর্যটকদের সাদরে আমন্ত্রণ জানায় ।কি যে অপরূপ দৃশ্য!! প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে পরম যত্নে ।দুজন চারিদিক দেখছি আর প্রকৃতির প্রেমে যেন লুটিয়ে পড়ছি।
হিমছড়ি পৌঁছে পাহাড়ে উঠে পড়লাম হাঁপাতে হাঁপাতে। তবুও উঠতেই হবে। হিমছড়িতে গিয়ে একদিক উত্তাল সমুদ্র, অন্যদিকে পাহাড়ে বসবাসকারী স্বজাতীয় বানরের পালের কিচিরমিচির শব্দে কখন যে দু ঘন্টা পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারিনি।
সেদিন ভীষণভাবে পড়েছিলাম হিমছড়ির প্রেমে। যাকে বলে love at first sight. এর পরে যতবার গিয়েছি, যতদিন কক্সবাজার ছিলাম চাকুরীজনিত কারণে, আমাকে সপ্তাহে অন্তত একদিন যেতেই হতো স্বজাতীয় ভাইদের দেখতে। সে মুগ্ধতা যেন শেষ হবার নয় ।
সমুদ্রের তীরে বসে রেস্টুরেন্টে স্ন্যাক আর চা খাওয়ার মজাই আলাদা ।কক্সবাজার ঘুরবো আর ক্যামেরাম্যানরা থাকবে না সেটা তো হতেই পারে না তাই না?
এখানে এসেও এক নাছোড়বান্দা ভাইয়ের সাক্ষাৎ পেয়ে গেলাম ।সে এমন ভাবে শিরিনের ব্রেন ওয়াশ করলো যে ,কাছে টাকা না থাকা সত্ত্বেও তাকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে এসে, বুথ থেকে টাকা তুলে তাকে পনেরশো টাকা দেওয়া হলো ।আমার মনে হয় কক্সবাজার গামী কোন পর্যটকই তাদের হাত থেকে রেহাই পান না। কি বলেন??
কক্সবাজার টুর শেষ করে চলে আসলাম চট্টগ্রাম বন্দরে ।সেখানে নামিদামি কিছু প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎ করলাম এবং বেশ ভালই রেসপন্স পেলাম ।এরপর ঢাকা। একটা স্বার্থক,সুন্দর ,মনমুগ্ধকর টুর শেষ হল। টুর শেষ হলেও যেন তার মুগ্ধতা কিছুতেই কাটছে না ।বারবার হারিয়ে যাচ্ছি প্রকৃতির প্রেমে স্মৃতির মোহনায়।
অফিস ট্যুর দিতে হবে ভেবে চাকরি থেকে রিজাইন দেওয়ার জন্য মনস্থির করলাম। কাকতালীয়ভাবে কক্সবাজারের একটা প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে অফার করল তাদের ওখানে গিয়ে কাজ করার জন্য। সম্পূর্ণ ডেস্কজব, লিমিটেড ডিউটি ,থাকা খাওয়া ম্যানেজমেন্ট এর ।নিঃসন্দেহে এটা লোভনীয় অফার ।আমি অত কিছু চিন্তা না করেই একেবারে কথা দিয়ে দিলাম। কেননা প্রেয়সী যখন ডাকে, পৃথিবীর সব কিছুই যেন তুচ্ছ মনে হয়। কক্সবাজার যেন আমাকে ডাকছে আকুল আবেদনে। কক্সবাজারের প্রেমের টানে যেন আমি উথাল পাথাল হাবুডুবু খেতে লাগলাম। সমুদ্র যেন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । তাইতো প্রেমিকের টানে পরিবার ছেড়ে এতদূর পাড়ি দেবার জন্য মনস্থির করলাম।
- ফারহানা পারভীন, ছোট গল্পকার ও প্রভাষক।
আরো সংবাদ
প্রথম দর্শনে প্রেম
- Dec 05 2025 16:39
নুরনগরে উদ্বোধন হলো 'বাইতুল হামদ্' জামে মসজিদ
- Dec 05 2025 16:39
সর্বশেষ
Weather
- London, UK
13%
6.44 MPH
-
23° Sun, 3 July -
26° Sun, 3 July





