Image

একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবিতে নিউইয়র্কে সমাবেশ

একাত্তরের ৯ মাসে বাংলাদেশে যে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তাকে ‘ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা’র স্বীকৃতি প্রদানের দাবি উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে।

এ দাবিতে ২০০১ সালে নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত ‘জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন’র পক্ষ থেকে ৯ ডিসেম্বর সোমবার ‘আন্তর্জাতিক জেনোসাইড (গণহত্যা) ও প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

জাতিসংঘ কর্তৃক ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে একাত্তরের ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব নয় বিধায় মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাসের নৃশংসতার স্বীকৃতি দাবি করা হচ্ছে।

এ দাবি আদায়ের জন্যে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে ৮ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন ‘জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি ড. প্রদীপ রঞ্জন কর। এগুলো হচ্ছে- স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা, দেশে-বিদেশে ব্যাপক জনমত তৈরী করা, উচ্ছ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় কমিটি বা সেল গঠন করা, একাত্তরের গণহত্যার দালিলিক প্রমাণগুলো সংগ্রহের মাধ্যমে একটি ডকুমেণ্ট প্রণয়ন করা, হলোকস্ট ডিনাইল আইনের ন্যায় বাংলাদেশে একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে যাতে গণহত্যা প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্ট নিয়ে কেউ বিতর্ক তুলতে না পারে, বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের পার্লামেন্টে বাংলাদেশে জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কুটনীতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাওয়ার পাশাপাশি এই জেনোসাইড (বর্বরোচিত গণহত্যা)র মূল নায়কসহ ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সেনাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করা, এবং ‘যেখানে গণহত্যা সেখানেই প্রতিরোধ’ এই নীতি গ্রহনের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সাথে কাজ করা।

জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যা দিবস স্মরণে ‘জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন’ নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে খাবার বাড়ি পার্টি হলে মোমবাতি প্রজ্জলন করে সোমবার সন্ধ্যায়। এ সময় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদর্শনের পর সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি সম্মান জানাতে।

এরপর "আন্তর্জাতিক জেনোসাইড (গণহত্যা) দিবসের তাৎপর্য ও একাওরে বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইড (গণহত্যা)’র আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি” শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন এর সভাপতি এবং নিউইয়র্কের রকোফেলার ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. প্রদীপ রঞ্জন কর। পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনজুর চৌধুরী । এতে অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো: আরিফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারী (প্রেস) নূরএলাহী মিনা।

এ সময় বক্তারা উল্লেখ করেন, ১৯৭০ সালের পাকিস্তান সাধারণ নির্বাচনের রায়কে অস্বীকার করা, বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা এবং বাঙালির স্বাধীনতার দাবিকে চিরতরে ধ্বংস করার মতলবে ১৯৭১ সালের পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে পূর্ব পাকিস্তানে হত্যা করে ৩০ লাখ বাঙালি, ধর্ষণ করে ২ লক্ষাধিক বাঙ্গালী নারীকে। নারী ধর্ষণ ব্যবহৃত হয় যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন দলিলপত্রেও বলা হয়েছে যে স্মরণকালের ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যার একটি হল ১৯৭১ বাংলাদেশের জেনোসাইড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশের পাকিস্তানিদের চালানো জেনোসাইড (গণহত্যা) সবচেয়ে ভয়ংকর জেনোসাইড। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়।

কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্যে মার্কিন রাজনীতি ও প্রশাসনে লবিং চালাতে হবে প্রবাসীদেরকে। নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধিরা তাদের দাবিকে উপেক্ষা করতে পারবে না। তবে এজন্যে দরকার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। এছাড়া, কলেজ-ভার্সিটিতে সভা-সিম্পোজিয়ামের পাশাপাশি কনসার্ট করাও যেতে পারে। হলিউডের কোন পরিচালক দিয়ে একাত্তরের গণহত্যার ওপর একটি মুভি করতে পারলে আন্তর্জাতিক জনমত জোরদার করার ক্ষেত্রে বড় একটি কাজ হবে বলেও উল্লেখ করেন কন্সাল জেনারেল।

নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযোদ্বা রাশেদ আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান চৌধুরী , মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন , মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ডা: মাসুদুল হাসান, দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এম এ করিম জাহাঙ্গির, আইন সম্পাদক এডভোকেট শাহ মো: বখতিয়ার, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহনাজ, আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ কামরুল হীরা, আকতার হোসেন, শেখ হাসিনা মে র সভাপতি জালাল উদ্দিন জলিল ও সাধারন সম্পাদক কায়কোবাদ খান, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক শেখ জামাল হোসেন , যুগ্ম আহবায়ক রহিমুজামান সুমন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হাসান জিলানী, নিউইয়র্ক মহানগর যুবলীগের সভাপতি খন্দকার জাহিদুল ইসলাম, যুক্তরাষ্ট্র ছাএলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

মানবকণ্ঠ/এইচকে