Image

গিফট সমাচার, লাগাম দরকার

দেশে থাকতে কে কীভাবে বড়দিন বা ক্রিসমাস উৎসব পালন করছে খোঁজখবর রাখতাম না। কারণ, বাংলাদেশে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীর সংখ্যাই বা কত! পরে কানাডায় এসে দেখলাম, না, ক্রিসমাস আসলে অনেক বড় উৎসব। অনেকদিন এদেশে বাস করে এখন এ উৎসবটাকে আর বিজাতীয় বলেও মনে হয় না, যা স্বাভাবিক। শুনে হাসি পাবে হয়তো, ওই অনুষ্ঠানে গেলে খ্রিস্টান হয়ে যাব ভেবে প্রথম বছর কী একটা অজুহাত দেখিয়ে সেখানে যাইনি। পরে বুঝেছি, এ তো আসলে একটা সামাজিক অনুষ্ঠান!

এখানে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পর্যায়ে মানুষ ক্রিসমাস উৎসব তো পালন করেই; এমনকি বিভিন্ন অফিসেও ক্রিসমাস পালন করা হয়। অফিসে ক্রিসমাস উৎসবের অংশ হিসেবে সহকর্মীদের মধ্যে Gift বা উপহার আদান প্রদানও হয়ে থাকে। গিফটগুলো দেয়া হয় বেনামে। তার মানে, কে কার কাছ থেকে কী গিফট রিসিভ করছেন তা অজ্ঞাত থাকে। প্রত্যেকের নাম আলাদা কাগজে লিখে একটা বাক্সে রাখা হয়; সেখান থেকে চোখ বুজে একটা নাম তুলতে হয়। যার নাম উঠবে, তাঁকেই উপহারটি দিতে হবে।

আমার ভাগ্যে নাম উঠেছে আমারই বসের। কী অদ্ভুত, তাই না? ভাবলাম, বসকে তো আর যেনতেন গিফট দেয়া যায় না, তাঁকে অবশ্যই দামি কিছু একটা দিতে হবে। আফটার অল, তিনিই তো কদিন পর আমার পারফর্মেন্স রিপোর্ট লিখবেন, বেতন বাড়াতে হবে কি না সেসব নিয়ে গোপন প্রতিবেদন দিবেন। স্বভাবতই অনেক চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

ওই অফিসে আমরা গোটা পঞ্চাশেক কর্মী ছিলাম। প্রত্যেকে যার যার নাম সংগ্রহ করার পর পুরো অফিসের প্রধান গিফটের নিয়মাবলী বলতে শুরু করলেন। নিয়মগুলোর একটি হলো, কোনো গিফটের অর্থমূল্য ১০ ডলারের অধিক হতে পারবে না। এর অর্থ, আপনার ভাগ্যে যাঁর নামই উঠুক না কেন, গিফট হতে হবে ১০ ডলারের নিচেই, যে কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বস'কে তেমন দামি কিছু দিতে পারিনি।

আমাদের দেশের অফিস আদালতে গিফট দেয়া-নেয়া নিয়ে এমন একটি নিয়ম চালু করা যায় না? গিফট বিষয়ে কঠোর নিয়ম করা গেলে দুর্নীতিও কিছুটা কমে যেত। সেসাথে, দায়িত্বশীল পদে থেকে পরিচিত-অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে দামি উপহার গ্রহণের প্রবণতাও কমতো।

লেখক- এম এল গনি : কানাডা প্রবাসী লেখক, ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও প্রকৌশলী।

মানবকণ্ঠ/এইচকে