Image

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের টোকিওর চেয়ে গাজায় ফেলা হয়েছে বেশি বোমা’

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের টোকিওতে যে পরিমাণ বোমা ফেলা হয়েছে তার চেয়ে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বেশি বোমা ফেলেছে। এমনটি জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা।

ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা বা ইউএনআরডব্লিউএর স্বাস্থ্য পরিচালক সেতা আকিহিরোর কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ইশিবা এ মন্তব্য করেন।আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। তিনি অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং এটিকে হৃদয়বিদারক বলে অভিহিত করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি হৃদয়বিদারক যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় টোকিওতে মার্কিন বিমান হামলার তুলনায় গাজায় বহুগুণ বেশি বোমা ফেলা হয়েছে।

গাজার কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত বছরের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ১৮ হাজার টন বোমা ফেলেছে। এ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় বোমার বিস্ফোরক শক্তির প্রায় এক দশমিক ৫ গুণ বেশি বোমা ফেলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমায় ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট পারমাণবিক বোমা ফেলে। যার ফলে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়।

তিন দিন পর আরেকটি বোমা নাগাসাকিতে আঘাত হানে। এতে আরও ৭০ হাজার জন নিহত হয়। জাপান ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।

ইশিবা সে সময়কার পরিস্থিতি স্মরণ করে জোর দিয়ে বলেন, টোকিও জাতিসংঘের সংস্থাকে সহায়তা অব্যাহত রাখবে। যদিও ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএকে সেখানে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে। এমনকি সংস্থাটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণাও করেছে।

গাজার মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় আরও অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। সেন্ট্রাল গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলা বেড়েছে। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণে আরও গভীরে ইসরায়েলি ট্যাংক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৪ হাজার ৩৩০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত এক লাখ চার হাজার ৯৩৩ জন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবরে হামলা চালিয়ে গোষ্ঠীটি প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করেছিল। তাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির অধীনে বেশকিছু জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছর ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে।

জাতিসংঘের হিসাব মতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসঙ্গে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিশরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।

ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে।