Image

খ্রিস্টাব্দ তথা ইংরেজি নববর্ষ

এটা শাশ্বত সত্য যে, নতুনকে সবাই আলিঙ্গন করে এবং কাছে টেনে নেয়। কারণ এর বৈচিত্র্যময়তায় মানুষকে বিভিন্নভাবে আনন্দ দিয়ে থাকে। এ বিশ্বে একই জিনিস চিরস্থায়ী নয়। এক সময়ে তা পুরনো হয়ে বিদায় নেয়। আবার নতুনের আমেজে সেই জায়গা আরেকটি দখল করে থাকে।

সেই প্রেক্ষাপটে কালের পরিক্রমায় সময়ও (Period) নতুন হিসেবে মানুষের মননশীলতায় অনন্য সুন্দর হিল্লোল বয়ে নিয়ে আসে। এখানে নব-সময় বলতে বিভিন্ন সালের প্রথম দিন হিসেবে নববর্ষকে বোঝানো হচ্ছে কিন্তু এ সময়কে ঘিরে সৌর (Solar) এবং চান্দ্র (Lunar) ভিত্তিক সাল বিভিন্ন জাতি অনুসরণ করে থাকে, যেমন- বঙ্গাব্দ, হিজরী, খ্রিস্টাব্দ ইত্যাদি।

বর্তমানে এ বিশ্বে যত প্রচলিত সাল আছে, তার মধ্যে ইংরেজি সাল এ অবনীর ২০৭টি দেশে যতখানি রেখাপাত করে থাকে, অন্যগুলো ততটা নয়। ইংরেজি নববর্ষের এ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার পেছনে হয়তো উপনিবেশবাদ বিশেষ ভ‚মিকা পালন করেছে। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য, এ ইংরেজি ক্যালেন্ডার বছর (জানুয়ারি টু ডিসেম্বর) প্রবর্তিত হয়েছে যিশু খ্রিস্টের (হজরত ঈসা আঃ) জন্মকে ঘিরে। এ সাল শুরুর ব্যাপারে অনেক বিতর্ক আছে। যতদূর জানা যায়, এ খ্রিস্ট বছরের গণনা শুরু হয়, তার জন্মের ৫২৫ বছর পর।

এক্ষেত্রে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার ও পোপ অষ্টম গ্রেগরিসহ অনেকের অবদান প্রণিধানযোগ্য। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে বর্তমানে এ ইংরেজি বছরে পর্যবসিত হয়েছে। মূলত ইংরেজি বারো মাসের নাম পৌরাণিক রোম ও গ্রিসের ভিন্ন ভিন্ন দেব-দেবীর নামের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণ করা হয়েছে। সাধারণত যিশু খ্রিস্টের জন্ম থেকে তৎপর সময়কে অউ (Anno Domini) এবং জন্মের আগে ইঈ (Before Christ) বলে অভিহিত করা হয়।

এক্ষেত্রে শূন্য (০) থেকে আরম্ভ করা হয়নি। তাই অউ ও ইঈ ১ (এক) পর ১ (এক) ধরা হয়েছে। যদিও এ বিষয়টি সমালোচিত। যাহোক, বর্তমান যে ইংরেজি ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি, আসলে এটি সৌর বছরভিত্তিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এতে অধিবর্ষের ক্ষেত্রে ৪০০ দ্বারা বিভাজ্যের নিয়ম চালু করা হয়েছে। সাধারণত অধিকাংশ দেশে সময় গণনার ক্ষেত্রে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সুবিধা ছাড়াও অর্থবছর হিসেবে যুগপৎ ব্যবহার হয়ে আসছে বিধায় তারা দুই দিকের সুবিধা একসঙ্গে পাচ্ছে।

ইতোমধ্যে ইংরেজি নববর্ষ পার হয়েছে অর্থাৎ ২০১৯ সালকে বিদায় দিয়ে ২০২০ ইংরেজি সাল বরণ করে নেয়া হয়েছে। এর জন্য মূলত আমরা যদি স্মরণকালের নানা সালের নববর্ষের দিকে তাকাই, তাহলে দেখি প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ব্যাবিলনে নববর্ষ উদযাপিত হতো আর তার স্থায়িত্ব ছিল একটানা এগারো দিন। যাহোক, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা আনন্দ উদ্দীপনায় সালটি গ্রহণ করেছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা পিছিয়ে নেই, তারাও নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে নজিস্ব ঢংয়ে।

কেননা এই ইংরেজি নববর্ষের সময় গণনা সবারই ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মজীবন থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে আছে। এটা সর্বজনবিদিত যে, ইংরেজি সালের প্রথম মাস জানুয়ারি আর এর প্রথম দিন ১ জানুয়ারি অর্থাৎ খ্রীস্টিয় নববর্ষ। এদিকে জানুয়ারি সম্পর্কে রোমানদের উপাখ্যানে একট সুন্দর কাহিনী প্রচলিত আছে। উল্লেখ্য যে, দু’মুখ সংবলিত রোমান দেবতা জানুসের (Janus) নাম অনুসারে জানুয়ারি মাসের নামকরণ করা হয়েছে। এই দেবতা ছিলেন স্বর্গের পাহারাদার।

তার একটি মুখ ছিল জরাজীর্ণ-পুরনো এবং অপরটি ছিল নব সুন্দর ও লাবণ্যময়। সেই হিসেবে পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ হিসেবে বিবেচিত। এই জানুয়ারি মাস তথা ১ জানুয়ারি বা ইংরেজি নববর্ষের সূত্র ধরে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন আঙ্গিকে আকর্ষণমূলক নতুন বছরের ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করে থাকে।

এ প্রেক্ষাপটে সম্যক ধারণার জন্য সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, ইংরেজি অধিকাংশ শব্দ এসেছে লাতিন শব্দ থেকে। সেই আবর্তে লাতিন Calendarium শব্দের অপভ্রংশ হয়ে উদ্ভব হয়েছে Calendar নামক বহুল জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত শব্দটি, যার আদি অর্থ হলো Account-Book। যাহোক, আসুন আমরা পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছর অর্থাৎ ২০২০ খ্রীস্টিয় বছর গ্রহণ করে নিই, যাতে থাকবে না অসুন্দর, হিংসা-বিদ্বেষ। শুধু থাকবে একে অন্যের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং গঠনমূলক চিন্তাধারা ও মননশীলতা।

লেখক: আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব - প্রবন্ধকার

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি