Image

ভিন্ন মতের রাজনীতি ও গণতন্ত্র

সুখী বা কল্যাণময়ী হতে চাওয়া মানুষের একটি স্বভাবজাত প্রবণতা। জীবন কর্ম পালনে মানুষ যে সকল কৌশল ও অপকৌশলের আশ্রয় নেয় তা মূলত ঐ সুখকেই প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে।

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে দেখা যায় যে মানুষতার ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে যয়ে তাকে কৌশল ও অপকৌশলের আশ্রয় নিতে হয়েছে, যা সপক্ষের কাছে কৌশল তা বিপক্ষের কাছে অপকৌশল, সৃষ্টিকালব্যাপী সপক্ষ-বিপক্ষের এই কৌশল-অপকৌশলের দ্বান্দ্বিক চক্রে মনুষ্য সমাজ আবর্তিত হয়ে আসছে।

তাহলে প্রশ্ন জাগে যে, এ দ্বন্দ্বের শেষ কোথায়? কিংবা আদৌ এর শেষ আছে কিনা? নবী-রাসুল, পয়গম্বর-অবতারগণ এর সমাধান কল্পে ধর্মীয় অনুশাসনের অবতারণা ঘটিয়েছেন। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, মার্কস, লেনিনের মতো কালজয়ী কিছু বিশেষ মানব এ দ্বন্দ্বের আপাত সমাধান টানতে যেয়ে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মতো মানব নিয়ন্ত্রণ কৌশল বাদ প্রবর্তন করেন।

কিন্তু বাস্তবতা হলো- পৃথিবীর প্রচলিত কোনো তন্ত্রই মানুষকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়। আমরা রাজতন্ত্র, এক নায়কতন্ত্র, সমাজতন্ত্রের ক্রম পতন এমনকি অধঃপতনও দেখেছি। বর্তমান বিশ্বের প্রজাতান্ত্রিক গণতন্ত্র (Republican Democracy) মূলক নিয়ন্ত্রণ বা শাসন ব্যবস্থা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপাতত জনপ্রিয় এই ব্যবস্থায় কিছু মোড়ল (Bossing) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শাসন পরিচালিত হলেও বৈশ্বিক গণতন্ত্র চর্চায় তাদের ভূমিকা নিদারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

১৭৫৭ সালে পলাশীর নির্মম ট্র্যাজেডির পর এই উপমহাদেশ দীর্ঘকালের জন্য ব্রিটিশ স্বৈরতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে চলে যায়। তখন এই দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বহু রক্ত ঝরিয়ে ও জীবন বিলিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল। অবশেষে ১৯৪৭ এ তা সম্ভব হয়েছিল। দ্বিজাতি তত্ত্বের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান হিসাবে আমরা পাকিস্তান পেয়েছিলাম। যদিও শুধু সাম্প্রদায়িক মতবাদের ওপর ভিত্তি করে গঠিত রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা কখনো টেকসই হতে পারে না। সেখানে সংস্কৃতির বিবেচনা একটি অপরিহার্য বিষয়। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সংস্কৃতি ছিল দুই বিপরীতমুখী ও অমিশ্রণীয়।

তবুও এই মর্মে ধারণা ছিল যে, ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ভেঙে জন্ম নেয়া গণতন্ত্রের সুবাসপুষ্ট পশ্চিম পাকিস্তান তার উদার নৈতিক গণতন্ত্র দিয়ে সাম্যের নীতিতে দুই পাকিস্তান পরিচালনা করবে। সাথে উভয়েরই মুসলিম মতাদর্শ তো আছেই। কিন্তু বিধি বাম। গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ তো দূরের কথা, মুসলমান হয়ে, মুসলমান ও অন্যদের  ওপর যে ন্যূনতম ন্যায্য আচরণ করা উচিৎ সেটাও তারা দেখায়নি। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের দিনের পর দিন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে শোষণ করা হয়েছিল। এমনকি মাতৃভাষা বাংলাকেও তারা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল যার দৃষ্টান্ত কালের ইতিহাসে নাই।

তাদের এই অমানুষিক আচরণ ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শোষণ, নির্যাতনকেও হার মানিয়েছিল। বাঙালিদের মননে ক্রমে সঞ্চিত হতে থাকে ক্ষোভের বারুদ। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সম্মিলিত সেই বারুদ ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয় যে ভাষণ মহাকালের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছে। সেই ভাষণের অগ্নিস্ফুলিঙ্গে সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস হাজার হাজার নারীর সম্ভ্রম হারিয়ে ও শিশুসহ ত্রিশ লাখ বাঙালির রক্তাক্ত লাশের বিনিময়ে আমরা পেয়েছিলাম একটি জাতি, দেশ ও পতাকা। এই মহাপ্রাপ্তির নেপথ্যের মহানায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতির পরিত্রাণ দাতা হিসাবে তার দীর্ঘকালের অগ্নিঝরা নেতৃত্ব ও অকুণ্ঠ আত্মত্যাগ তাকে বাঙালি জাতির পিতা হিসাবে মহিমান্বিত করেছে।

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একটি বিশ্বজনীন সরল ইতিহাস। এই ইতিহাসের বিশ্লেষণে গেলে দেখা যায় যে, তারা তৎকালীন নির্যাতিত বাঙালিদের সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চাগুলোতে পবিত্র ইসলামকে ভুল ও মনগড়া ব্যাখ্যায় ব্যাখ্যায়িত করে সাম্প্রদায়িক নষ্ট তকমা লাগিয়ে বিতর্কিত করে তুলত। যে জাতীয় সঙ্গীত বাঙালি হৃদয়ের আবেগ-তা ইসলামি দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক বলে তারা নিষিদ্ধ করেছিল। স্বদেশ প্রেম, সংস্কৃতি প্রেমকে তারা একইভাবে আখ্যায়িত করত। যে ‘জয়বাংলা’ আমাদের অস্তিত্বের স্লোগান, তা তারা হিন্দুয়ানি আখ্যা দিয়ে এটা বললে পাপ হবে এই প্রচারণা চালিয়ে বাঙালি মুসলমানদের সংগ্রামী চেতনাকে দুর্বল করার অপচেষ্টা চালাত।

এমনকি বঙ্গবন্ধুর পরম মানব হিতৈষি অসাম্প্রদায়িক নীতিকে তারা ইসলামবিরোধী ও নাস্তিকতার অপব্যাখ্যা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াত। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো তাদের এই নষ্টামির পক্ষে জনমত তৈরিতে পবিত্র মসজিদকেও তারা ব্যবহার করতে দ্বিধা করেনি। শুধু পশ্চিম পাকিস্তানিরাই নয় পাশাপাশি তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াত-শিবিরও ঐ একই অপকর্মগুলো করত। ‘নায়েরে তাকবির’ এর সাথে ‘আল্লাহু আকবর’ জুড়ে দিয়ে ২৫ মার্চের কালো রাতে ঘুমন্ত নিরীহ মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মী বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। বাঙালি ধ্বংস হলে ইসলাম রক্ষা হবে এই বলে তারা গণিমতের মাল হিসাবে অসংখ্য বাঙালি নারীদের ধর্ষণসহ ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে ছারখার করেছিল।

মূলত তারা এটিকে পরোক্ষভাবে ‘ক্রুসেড’ বা ‘ধর্ম যুদ্ধ’ বলে চালিয়ে প্রত্যক্ষভাবে বাঙালি জাতিকে নির্মূলের হিংস  অপচেষ্টায় মেতেছিল যা সমগ্র বিশ্ব বিবেক ঘৃণাভরে তা দেখেছিল। তবুও বাঙালিদের দুর্দান্ত জাতি প্রেম ও স্বদেশ প্রেমের কাছে তাদের সকল পশুত্ব পরাজিত হয়েছিল। যদিও আমরা ব্যথিত হই যে, স্বাধীনতা উত্তর আজো তাদের এদেশীয় দোসররা বাঙালি দর্শন ও তার চর্চাকে ইসলামবিরোধী বলে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে ভণ্ড মতবাদ দিয়ে বেড়ায়।

এটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলা যায় যে, ঐ নারকীয় গোষ্ঠী ও তাদের সমর্থনকারীদেরকে মুসলমানের কোনো বিন্দু বিসর্গের সংজ্ঞায় আনা যায় না। কার্যত তারা মুসলমান ও ইসলামের মাহাত্ম্য এ অঞ্চলে ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা কখনোই প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। পৃথিবীর প্রথম সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল মদিনা যা প্রিয় রাসুলেরর নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে সকল ধর্ম, বর্ণ গোত্রের অধিকার সংরক্ষিত ছিল।

মহান আল্লাহর এই সৃষ্টি জগতের প্রতিটি উপাদানের ওপর প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার আছে-পবিত্র ইসলামের এই মহান দর্শনের আলোকে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র সাম্প্রদয়িক হতে পারে না। তাই রাসুল মুহম্মদ (সা.) তার অসাম্প্রদায়িক মদিনা রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সভ্যতার বুকে সত্যিকার জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বীজ বপন করে গিয়েছিলেন যা অনন্তকাল উৎকৃষ্টের উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি দেখিয়েছেন ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। মহান রাসুলের সেই প্রদর্শিত মহান পথেই স্বাধীন বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক সাম্যের বন্ধনে সংবিধানবদ্ধ করেছিলেন।

সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের দরবারে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ উন্নয়নের সোপান বেয়ে যখন উপরে উঠছিল এমনই সময় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। লক্ষ্য ছিল এদেশকে অন্ধকার পশ্চাতে ঠেলে দেয়া। ঠিক সে কারণে সংবিধানের অসাম্প্রদায়িক চেতনাতে আঘাত করা হয়। সেই থেকে এদেশ ক্রমশ বিভাজনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে থাকে প্রজন্ম পরম্পরায়। ইতিহাসের নগ্ন বিকৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বাঙালি জাতীয়তাবাদ যেখানে এদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্র একাকার হয়ে যায় তা হত্যা করে প্রহসনের জাতীয়তাবাদ প্রচলন করা হয়।

বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধারণ ও লালন করতে হলে-(১) বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে; (২) এদেশীয় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার শত্রু জামায়াত শিবিরকে বর্জন করতে হবে; (৩) বাঙালি সংস্কৃতির ওপর শ্রদ্ধাশীল হতে হবে; (৪) বিশ্ব স্বীকৃত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণ মানতে হবে; (৫) বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসাবে মানতে হবে; (৬) তার হত্যাও হত্যাকারীকে ঘৃণা করতে হবে; (৭) জেল হত্যা বা চার জাতীয় নেতা হত্যা ঘৃণাভরে পালন করতে হবে; (৮) মুজিবনগর সরকার মানতে হবে; (৯) বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস লোক দেখানো পালন বাদ দিয়ে এর জড়িতদের বয়কট করতে হবে; (১০) মানবতার শত্রু পাকিস্তান কর্তৃক এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কটাক্ষকে রাজনৈতিকভাবে ঘৃণা করতে হবে এবং (১১) যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রশ্নাতীতভাবে মানতে হবে।

উল্লেখিত প্রতিটি নিবেদনই বাঙালি জাতয়ীতাবাদের অবিচ্ছেদ্য প্রবাহ। এগুলো মন থেকে মানা ও পালন করার মাধ্যমে কার্যত বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বাইরের কোনো মতবাদ ও তৎপরতা এদেশে ঐতিহাসিক ও নৈতিকসূত্রে বৈধ হতে পারে না। তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিবর্জিত কোনো দল বা গোষ্ঠী এদেশে অবশ্যই বৈধ হতে পারে না। কিন্তু অবাক বিষয় হলো, বি.এন.পি ও তার দোসর জামায়াত এগুলোর কোনোটিই পালন তো করেই না বরং এগুলোর চরম নেতিবাচক চর্চায় সর্বদা মশগুল থেকে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে। যখন তাদের এই নষ্ট রাজনীতির বিপক্ষে কোনো সরকার, দল ও সচেতন জনগোষ্ঠী দেশের স্বার্থে বিরোধিতা করে তখন তারা গণতন্ত্র ও ভিন্ন মতের ওপর আঘাত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।

এমনকি তারা জানমালের ও ক্ষতি করে। প্রকৃত গণতন্ত্র সৃষ্টিশীলতাকে সমর্থন করে, ধ্বংসযজ্ঞতাকে ও বিজাতীয়তাকে নয়। এদেশের ঐতিহাসিক বাস্তবতায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপক্ষের চর্চা কখনো গণতান্ত্রিক চর্চা হতে পারে না। যে ‘ভিন্নমত’ বাঙালির জাতি সত্তায় ও ইতিহাস ঐতিহ্যে আঘাত করে তা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সত্যিকার গণতন্ত্র কখনো রাষ্ট্র, জাতীয়তা, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে আঘাত করে না। এগুলো একে অপরের পরিপূরক। ভয়ঙ্কর বিস্ময় হলো! এদেশের অনেক শিক্ষিত ও উচ্চ শিক্ষিত মানুষ এবং কিছু বুদ্ধিজীবীগণ (?) তাদের পক্ষে সাফাই গায়।

এদের হতে আমাদের সতর্ক থেকে জনগণকে সচেতন করতে হবে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছর পেরিয়ে গেল, অথচ জনগণের একটা বিরাট অংশ এই ইস্যুটি ঘিরে ভুল পথে এখনো এদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই ভুল যতদিন সংস্কার করা না যাবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। পরিশেষে, ‘স্বদেশ প্রেম ইমানের অঙ্গ’-মহান নবীজীর এই বাণীকে আমরা সকলে হৃদয়ঙ্গম করে দেশকে ভালোবেসে যেন পথ চলতে পারি এই শুভ প্রত্যাশা রইল।

লেখক: কাজী মাসুদুর রহমান - প্রাবন্ধিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, যশোর।

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি