Image

সৈয়দপুরে মদিনা মোড় থেকে পোস্ট অফিস মোড় পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ শুরু 

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে : উন্নয়নে ঝিমিয়ে থাকার পর অবশেষে সৈয়দপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র মদিনা হোটেল মোড় (দিনাজপুর রোড মোড়) থেকে পোস্ট অফিস মোড় পর্যন্ত ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। 
এরমধ্যে মদিনা হোটেল মোড় থেকে নিরিবিলি হোটেল পর্যন্ত ৫৫ মিটার সিসি ঢালাইসহ আরসিসি রাস্তা এবং পোস্ট অফিস মোড় পর্যন্ত বাকি ৬০০ মিটার রাস্তা কার্পেটিং করা হবে। গত সপ্তাহে ওই সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এ সড়কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। এতে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এলজিসি আরআরপি -কোভিড-১৯ প্রকল্পের আওতায় শহরের ওই রাস্তার কাজ চলছে। সৈয়দপুর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


সুত্র জানায়, সৈয়দপুরে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থার কারণে মানুষজনের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জনগনের দুর্ভোগের বিষয়টি উঠে আসে। তবে ড্রেন নালাসহ পাড়া মহল্লায় ছোট ছোট রাস্তাগুলোর উন্নয়ন কাজ চললেও বড় বড় রাস্তাঘাট ড্রেন নালা নির্মাণে তেমন বরাদ্দ না আসায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কের উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে পৌর পরিষদ ছিল নিরুপায়। এনিয়ে পৌর পরিষদও জনগনের প্রশ্নের মুখেও পড়েছিলেন। সে সময় তারা পৌরবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন রাস্তাঘাটের উন্নয়নে বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করা হবে। অবশেষে এলজিসিআরআরপি- কোভিড-১৯  প্রকল্পের মাধ্যমে পৌর এলাকার উন্নয়নে সরকারিভাবে বরাদ্দ এলে সাবেক মদিনা হোটেল মোড় থেকে পোস্ট অফিস মোড় পর্যন্ত খানাখন্দে ভরা ৬৫০ মিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য ওই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এজন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া গত ১ জুলাই আরইএন এন্ড নির্মাতা কুশলী নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। এরপরেই ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নাদের এন্টারপ্রাইজ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করে গত সপ্তাহে। বর্তমানে পুরোদমে চলছে সড়কটির নির্মাণ কাজ। ওই সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় ওই সড়কের পাশের ব্যবসায়ীসহ সচেতন সমাজ পৌর পরিষদকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।


ব্যবসায়ী আসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও এ সড়কের কাজ শুরু হওয়ায় তারা আনন্দিত।  তবে শহরের অন্যান্য প্রধান প্রধান সড়কগুলোর কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা হয় সেজন্য পৌর পরিষদকে আরও উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন। ওই এলাকার আরেক ব্যবসায়ী একরাম বলেন সড়কটি খানাখন্দ থাকার কারণে প্রায়ই ঘটতো দূর্ঘটনা। এটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে সে আশংকা তেমন একটা থাকবেনা। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সেখানে দেখা যায় নির্মাণ শ্রমিকরা রাস্তার সিসি ঢালাইয়ের জন্য রড বিছানোয় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। পাশে ঢালাইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অন্যান্যরা। এসময় সেখানে কাজ পরিদর্শনে দেখা যায় পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম ও সহকারি প্রকৌশলী মো. মাসুৃম সাজ্জাদকে। এবিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, কাজের গুনগত মান নিয়ে যাতে কোন প্রশ্ন না ওঠে সেজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়েছে। আর কাজের মান যাতে বজায় থাকে সেজন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। 
এবিষয়ে কথা হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাদের এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. শাহনেওয়াজ হোসেন শানুর সাথে। তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কাজের মান নিয়ে কখনই তিনি আপোষ করেননি। শিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। 
সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বর মাসেই কাজ শেষ করা হবে। যদিও কাজের সময়সীমা রয়েছে ডিসেম্বর পর্যন্ত। 
উল্লেখ্য এরআগে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট ও ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সুত্র জানায়, এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে পৌর এলাকার ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের দুই সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ওইদিন পৌর এলাকার ছমির উদ্দিন লেন ও হাজী চেতনা লেনের সড়ক দুইটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পৌর ৭ নং ওয়ার্ডের ছমির উদ্দিন লেন সড়কের ২৫০ মিটার এবং ৮ নং ওয়ার্ডে হাজী চেতনা লেন সড়কের ১৯৫ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ও ৩৩ লাখ টাকা। এ দুইটি সড়ক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাতা কুশলী ও রুমানা এন্টারপ্রাইজ। এরআগে পৌরবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত রাজ্জাকিয়া স্কুল লেন থেকে  হাতীখানা ও হাতিখানা ক্যাম্প হয়ে -ক্যান্টবাজার ড্রেন নির্মাণের কাজ গত ৭ জুলাই উদ্বোধন করা হয়।


পৌরসভার সুত্র জানায়, এক হাজার ৮০০ ফুট দৈর্ঘ্যের আরসিসি এই ড্রেন নির্মাণে পৌরসভার ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৯৪ লাখ টাকা। সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বলেন, নানাবিধ সমস্যার মধ্যেও পৌর পরিষদ সৈয়দপুর পৌর এলাকার উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। শহরের অন্যান্য প্রধান প্রধান সড়কগুলোর উন্নয়নে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন রয়েছে তাদের। বরাদ্দ মিললেই ওইসব সড়কের জন্য টেন্ডার আহবান করা হবে।