Image

টানা বৃষ্টিতে সৈয়দপুরে শীতের আমেজ: বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি : প্রচন্ড তাপপ্রবাহের পর গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে যেমন মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে, তেমনি অত্রাঞ্চলে আগাম শীতের আমেজ অনুভুত হচ্ছে। তবে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষজন। বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন সৈয়দপুরে ৩৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। নীলফামারী জেলার ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সুত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সুত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ৫৭, শুক্রবার ১৮৩ ও গতকাল শনিবার দুই দফায় ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তীব্র তাপদাহের পর সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলার সর্বত্র গত বুধবার থেকে শুরু হয় বৃষ্টি।  কখনও থেমে, আবার কখনও ভারী বৃষ্টি হয়। তবে মুষলধারায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয় বুধবার গভীররাত থেকে। এটি চলে শুক্রবার রাত পর্যন্ত।  গতকাল শনিবার সকালে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তা বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পরে আবারও শুরু হয় শীত নামানো বৃষ্টি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। 

এদিকে গত তিনদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে। এতে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও বিপাকে পড়েছে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষজন। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে সৈয়দপুর শহরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে পানি ওঠায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষজনের। বৃষ্টির কারণে অনেক রাস্তাঘাট খানাখন্দে পরিণত হওয়ায় অনেক কষ্টে যানবাহন চলাচল করছে। ভোগান্তি বেড়েছে মানুষজনের। অব্যাহত বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে পড়েছে। আশ্বিনের বৃষ্টিতে আয় রোজগার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এতে দিনমজুর, অটোরিকশা,  রিক্সা, ভ্যানচালক ফুটপাতে অবস্থান করা রিক্সা ও সাইকেল মেকারসহ মজুর শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষজন টানা বৃষ্টির কারণে কাজে যেতে পারছেন না। অটোরিকশা চালক বাপ্পি বলেন, অন্যান্য সময়ে মালিকের জমা দিয়ে ৪/৫ শত টাকা আয় হতো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে রোজগার কমে গেছে। শহরের ১ নং রেলওয়ে ঘুমটিতে কথা হয় রিক্সাচালক ইউনুসের সাথে। তিনি বলেন,সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিনশত টাকা রোজগার হয়েছে। রাত পর্যন্ত আর কতই বা হবে। এতে মালিকের জমা টাকা দিয়ে সংসারের খরচ জোগানই মুশকিল হয়ে পড়বে। সেলুন কর্মচারি নাসিম বলেন, টানা বৃষ্টিতে দোকানে তেমন কেউ আসছেনা। ফলে হাত গুটিয়ে বসে আছেন তিনি। তার মতো অনেক নিম্ন আয়ের মানুষজনও বলেন একই কথা। তারা বলেন, আগে টানা বৃষ্টি হলেই জন প্রতিনিধিরা বাসা বাড়িতে গিয়ে কিছুনা কিছু সাহায্য সহযোগিতা করতো। কিন্তু এখন তাদের কাউকে দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন পাইকারি সবজি বাজারে আমদানি কমে গেছে। ফলে খুচরা বাজারে বিভিন্ন শাক সবজির মূল্য প্রকার ভেদে ১০/২০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশী দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে বৃষ্টিপাত যদি অব্যাহত থাকে তাহলে শাক সবজিসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এ ছাড়াও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে টানা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কমে এসেছে অত্রাঞ্চলে। সন্ধ্যা হলেই শীতের আমেজ অনুভূত হচ্ছে। অনেককে শীতের হালকা গরম কাপড়ও গায়ে জড়াতে দেখা যাচ্ছে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই তাপপ্রবাহ যাচ্ছিল। তবে কয়েকদিনের  টানা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা যেমন কমেছে তেমনি এই বৃষ্টির কারণে শীতের আগাম আমেজ দেখা দিতে পারে।