
খোঁজ মিলেছে আত্মীয়স্বজনের, সৈয়দপুরে উন্মাদ বৃদ্ধের কাছে মিলল ৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা
- Jun 15 2025 10:56
মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে: নীলফামারীর সৈয়দপুরে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করা মো. গনি মিয়া ( ৬৭) নামে এক উন্মাদ (মানসিক ভারসাম্যহীন) বৃদ্ধের কাছ থেকে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫২ টাকা পাওয়া গেছে ।
শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে উন্মাদ (মানসিক ভারসাম্যহীন) ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা রংপুরের হিউম্যানিটি বাংলাদেশ নামে মানবিক সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে গোসল করাতে গেলে তার কাছে থাকা ওই টাকার সন্ধান মেলে।
বৃদ্ধের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা থাকার সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে বৃদ্ধ গনি মিয়া পুলিশী নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছেন। রবিবার (১৫ জুন) দুপুরে থানায় গিয়ে দেখা যায় বৃদ্ধ গনি মিয়া পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন কুমারের কার্যালয়ে বসে রয়েছেন। রংপুর থেকে আত্মীয় স্বজন এলে যাচাই বাছাই শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমন তথ্য জানিয়েছেন সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফইম উদ্দিন।
জানা যায়, ঝড়, বৃষ্টি আর শীত বা গরম যাই হোক না কেন, গায়ে মোটা কাপড়ের পোশাক ও বালিশ আকারের কাপড়ের গায়ে ঝুলিয়ে চলাফেরা করে আসছিলেন মো. গনি মিয়া। তাঁকে শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, রেলওয়ে স্টেশন ও মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে দেখা যেত বেশী। একা একা কথা বলা ওই উন্মত্ত বৃদ্ধকে দেখেই বোঝা যেত দীর্ঘদিন গোসল করেন না তিনি। তাঁকে ভালো করে চেনেন, এমন কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, কেউ খাওয়া দিলে তা খেতেন। কিন্তু কারও কাছে খাওয়া চাননি তিনি। কোন দিন কারও কাছ থেকে খাওয়া না এলে তিনি হোটেল থেকে নিজের টাকায় খাবার কিনে খান।
কয়েক যুগ ধরে এমন চিত্র দেখে আসছেন তারা। ঠিক এমনই অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা রংপুরের হিউম্যানিটি বাংলাদেশ নামের স্বেছাসেবী সামাজিক সংগঠনের দুই সদস্য জয়নুল আবেদীন ও ময়নুল ইসলাম শনিবার (১৪ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সৈয়দপুরের বিভিন্ন এলাকায় শহরের বিভিন্ন বয়সের ৪ জন উন্মত্ত (মানসিক ভারসাম্যহীন) ব্যক্তিকে চুল, নখ কাটাসহ গোসল করান। পরে তাদেরকে নতুন পোশাক পরানো হয়।
বিকেল ৪টার দিকে সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠের মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে একই ধরণের উন্মত্ত বৃদ্ধ মো.গনির (৬৭) সন্ধান পান ওই দুই স্বেচ্ছাসেবক।
এসময় সেখানকার কয়েকজন মাইক্রোবাস চালকের সহযোগিতায় তাঁকে বুঝিয়ে গোসল করাতে রাজি করানো হয়। পরে গোসল করানোর জন্য সংগঠনটির সদস্যরা তার শরীরের পোশাক খুলতে গিয়ে দেখে তার শার্টের হাতা, কলার ও পোশাকের বিভিন্ন জায়গায় মোড়ানো অবস্থায় বিপুল পরিমাণ টাকা। এছাড়া তাঁর সাথে থাকা বালিশ আকারের কয়েকটি কাপড়ের ব্যাগে অসংখ্য এক হাজার, পাঁচশত ও একশত টাকার নোট ও কয়েক হাজার বিভিন্ন মানের মূদ্রা পাওয়া যায়।
এসব দেখে টাকা থাকার বিষয়টি দুই স্বেচ্ছাসেবক উপস্থিত লোকজনকে জানায়। গনি মিয়ার টাকা দেখতে উচ্ছুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকলে হিউম্যানিটি বাংলাদেশের সেচ্ছাসেবক ময়নুল ইসলাম জরুরী সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দেন। পরে সৈয়দপুর থানা পুলিশ টাকাসহ ওই উন্মত্ত বৃদ্ধকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে থানা পুলিশ ও উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয়দের সামনে টাকা গণনা করা হয় । প্রায় চার ঘন্টাব্যাপী টাকা গণনা শেষ হয় রাত সাড়ে ৯ টায়। গণনায় মোট টাকার পরিমাণ দাড়ায় তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫২ টাকা।
এদিকে ওই বৃদ্ধের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা কোথা থেকে এলো এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা জানান, আমরা জানি তিনি একজন ভালো রং মিস্ত্রি ছিলেন। ৮০ 'র দশক থেকে আমরা তাঁকে সৈয়দপুর শহরে দেখছি। তিনি শহরে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ান। তাঁকে অপ্রকৃতস্থ মনে হলেও কারও সাথে তেমন কথা বলতেন না। মাঝে মাঝে তাঁর বিষয়ে জানতে কথা বললে, তিনি শুধু বলেন, তার বাবার নাম আইয়ুব, বাসা রংপুরের আলমনগর রবার্টসনগঞ্জে। তাঁর কোন আত্মীয় স্বজন নেই। তিনি বাংলা ও উর্দুতে কথা বলতে পারেন। তাঁর সম্পর্কে ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, তিনি কারও কাছে খাওয়া চাইতেন না। কেউ খাওয়া দিলে খেতেন। অনেক সময় নিজের টাকা দিয়ে হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতেন তিনি। তাকে অনেকেই টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করেন। সেই টাকাই খরচ না করে তিনি বালিশ আকারের ব্যাগ বা শার্টের বিভিন্ন জায়গায় এবং কাগজের ঠোঙায় রেখে দিতেন।
হিউম্যানিটি বাংলাদেশের সদস্য জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা ৫ বছর যাবৎ দেশের বিভিন্ন জেলায় উন্মত্ত ( মানসিক ভারসাম্যহীন) ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করছি । তাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে নুতন কাপড় পড়িয়ে থাকি। পরে তাদেরকে খাওয়া দাওয়া করিয়ে আমরা তাদের পরিবারের সন্ধান করে তাদের হাতে তুলে দেই । তিনি বলেন এই পর্যন্ত আমাদের সংগঠন ৮১০ জন ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে নিয়ে কাজ করেছি। তাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিকে তাদের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছি । তিনি বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে গিয়ে অনেকের কাছে সর্বোচ্চ ১০/১৫ হাজার টাকা পাওয়া গেছে।
কিন্তু সৈয়দপুরে ব্যতিক্রম। এত বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার ঘটনা বিরল।
এদিকে উন্মত্ত বৃদ্ধ মো.গনির কাছ থেকে টাকা পাওয়ার ঘটনা এবং তাঁকে বর্তমানে কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তাঁকে পুলিশী নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফইম উদ্দিন জানান, ওই বৃদ্ধ গনি মিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতেন। তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের পর টাকাসহ তাঁকে আমরা নিরাপত্তা হেফাজতে রেখেছি। তাঁর আত্মীয়রা রংপুর থেকে এলে যাচাই বাছাই শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো সংবাদ
সুনামগঞ্জে বিজিবি”র অভিযানে ভারতীয় অবৈধ পণ্য আটক
- Jun 15 2025 10:56
নওগাঁর পত্নীতলায় ভটভটি ও পিকআপের সংঘর্ষে পিকআপ চালক নিহত
- Jun 15 2025 10:56
কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠন
- Jun 15 2025 10:56
সৈয়দপুরে গোডাউন থেকে রেললাইনের মালামাল পাচারের অভিযোগে প্রকৌশলী আটক
- Jun 15 2025 10:56
সর্বশেষ
Weather

- London, UK
13%
6.44 MPH
-
23° Sun, 3 July
-
26° Sun, 3 July