Image

নাটোরে এনসিপি’র মঞ্চে এসে শিশু আবীর হত্যার বিচার চাইলেন মা-বাবা

অমর ডি কস্তা, নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের বড়াইগ্রামে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জুলাই পদযাত্রা’র কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আয়োজিত পথসভার মঞ্চে এসে শিশুপুত্র আবীর হত্যার বিচার চাইলেন তার মা ও বাবা। ওই মঞ্চেই এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলাম ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তাদের বক্তব্যে আবীর হত্যার প্রকৃত খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও উপযুক্ত বিচার দাবি করেন এবং এ হত্যাকান্ড সহ এই এলাকার অন্যান্য হত্যাকান্ড, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি নির্মূলে এনসিপি পাশে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। সোমবার বিকেলে উপজেলার বনপাড়া কালিকাপুর বাইপাসে বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে এনসিপি’র পথসভার মঞ্চে উপস্থিত হয়ে শিশু আবীর হত্যার বিচার চাইলেন আবীরের মা আঁখি খাতুন ও বাবা মিলন হোসেন। এ সময় শিশু আবীরের অন্যান্য স্বজনসহ শতাধিক এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৬ জুন রাত ৯টার দিকে বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌর শহরের মহিষভাঙ্গা এলাকার নির্মাণাধীন একটি মসলা ফ্যাক্টরী সংলগ্ন ভুট্টা ক্ষেতের পাশে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মিনহাস হোসেন আবীর (৯) এর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত আবীর ওই পৌর শহরের মহিষভাঙ্গা মহল্লার মিলন-আঁখি দম্পত্তির একমাত্র সন্তান ও বনপাড়া আদিব ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের মেধাবী ছাত্র। তাকে ইট দিয়ে মাথা ও মুুখমন্ডলে গুতিয়ে গুতিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ এই হত্যাকান্ডটিকে মোবাইল ফোনে টিকটক করা নিয়ে তার সাথে থাকা হযরত আলী মোল্লা (১২) এর দ্বন্দে খুন হয়েছে বলে জানালেও নিহত আবীরের মা ও বাবা সহ স্বজনরা তা বিশ্বাস করছে না। এনসিপি’র মঞ্চে সার্বক্ষণিক কান্না করে শিশু আবীরের মা আঁখি খাতুন তার বক্তব্যে বলেন, এই খুনটির সাথে বড় মানুষও জড়িত। কারণ হিসেবে পুলিশের হাতে আটক অভিযুক্ত ১২ বছর বয়সী হালকা গড়নের হযরত কখনও তাদের ছেলে আবীরকে একা এভাবে হত্যা করতে সক্ষম হবে না এবং হত্যার পর লাশ কোলে বা কাঁধে করে বা টেনে দূরে ভুট্টা ক্ষেতের পাশে নিতে সে একা সক্ষম হবে না। এছাড়া আবীরের মৃতদেহটি শুকনো ভুট্টা গাছ দিয়ে ঢাকা ছিলো যা হযরতের চিন্তার মধ্যে কখনও আসবে না। তিনি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত পূর্ণ বয়সী একাধিক ঘাতকদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান। তিনি তার কোমলমতি একমাত্র সন্তানের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আবীরের মতোই নৃশংসভাবে নির্যাতন করে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়ার দাবি জানান।

শিশু আবীরের পিতা মিলন হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, যদি আমার উপর কারও রাগ থাকে তাহলে আমাকে মেরে ফেলতেন। কেন এই অবুঝ শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করলেন। আমি এর সাথে জড়িত আটককৃত হযরত আলী সহ সহযোগী অন্যান্য পূর্ণ বয়সী খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি করছি।  

বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম সারোয়ার হোসেন জানান, হত্যাকান্ডটি ১২ বছর বয়সী হযরত আলী সংঘটিত করেছে বলে সে স্বীকার করেছে। তারপরেও অন্যান্য আর কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করছে। নিশ্চয়ই প্রকৃত খুনীরা ধরা পড়ুক ও শাস্তি পাক তা সকলেরই সাথে আমারও কাম্য।

পদযাত্রাকালে অনুষ্ঠিত ওই পথসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, নাটোর জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুল মান্নাফসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।