Image

আবারো দুর্ঘটনা, প্রাণহানি

সড়ক দুর্ঘটনা যেন আমাদের পিছু ছাড়ছেই না। একের পর এক অমূল্য প্রাণ ঝরে যাচ্ছে কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। মৃত্যু প্রাণিজগতের এক অমোঘ সত্য। কার মৃত্যু কীভাবে হবে তা কারো জানা নেই। তবে কিছু কিছু মৃত্যু এত অস্বাভাবিক এবং অসময়ে ঘটে যে, মনকে প্রবোধ দেয়া চলে না। ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি পরিচালক সাইফুজ্জামান মিন্টুসহ তার দুই কন্যা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন স্ত্রী ও পুত্র। তাদের আঘাতও কম নয়। একই পরিবারের এতজনের হতাহতের খবর স্বাভাবিকভাবেই মনকে ভারাক্রান্ত করে। আমরা আশাকরি আহতরা সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে তাদের সামনে কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তা আমাদের জানা নেই। দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে তাদের বাকি জীবন পার করতে হবে। শোক তাদের জন্য শক্তি হয়ে উঠুক।

একটি সড়ক দুর্ঘটনা শুধু এক বা একাধিক প্রাণহানি বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়াই নয়। এর সঙ্গে একটি পরিবার ও স্বজনদেরও স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। যারা নিহত হন তাদের শোক বহন করার পাশাপাশি যারা আহত হন তাদের সারাজীবন পঙ্গুত্ব বহন করে চলতে হয়। তারা পরিবার, সমাজের জন্য বোঝা হয়ে ওঠেন। এ দুর্বিষহ বহন করে চলা সহজ কাজ নয়। রাষ্ট্রও অনেক মেধাবী, কর্মক্ষমজনের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার, সংশ্লিষ্ট মহল নানা ধরনের পদক্ষেপ নিলেও এর সন্তোষজনক প্রতিকার না মেলায় বিষয়টি দিন দিন অসহায়ত্বের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সড়কে প্রাণ হারানো যেন নিয়তি হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি পরিচালক নিজে গাড়ি চালিয়ে ২৮ ডিসেম্বর ভোরে বান্দরবান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। সকাল ৮টার সময় উপজেলার সলিমপুর ফৌজদারহাট মহাসড়কের পোর্টলিংক রোড অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পোটকানেটিং রোড থেকে আসা একইমুখী একটি লরি সজোরে প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়। এ সময় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার দুই কন্যার মৃত্যু হয়। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ তাৎক্ষণিক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরে সেখানে ওই ব্যাংক কর্মকর্তারও মৃত্যু হয়- ২৯ ডিসেম্বর দৈনিক মানবকণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে এমন তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপার চন্ডিপুর নামক স্থানে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় জসিম কুমার (২০) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় মোটরসাইকেলের অপর যাত্রী আহত হন। এসব সংবাদ আমাদের ব্যথিত করে। এসব দুর্ঘটনায় কার দোষ বা কার ত্রুটি ছিল তদন্তের মাধ্যমে তা নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসবে। কিন্তু যে সব অমূল্য প্রাণ আমরা হারালাম এর প্রতিস্থাপন তো আর হবে না। আমরা মনে করি, সড়ক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল আনতে পারে। যদিও পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আইনটি বাস্তবায়নে আরো ছয় মাস সময় তাদের দেয়া হয়েছে। তবে এর পর আর তাদের কোনো সুযোগ না দেয়ার ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। একইসঙ্গে সময় দেয়া হলেও নিয়মিত নজরদারি চলমান রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে সড়ক নিরাপদ করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। এর বিকল্প নেই।

 

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি