Image

ই-বর্জ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হোক

জগতে কোনো কিছুই ফেলনা নয়। বিজ্ঞানের ভাষায় কোনো বস্তু একেবারে ধ্বংস হয় না। বরং রূপ বা আকৃতি পরিবর্তন করে। পরিবর্তিত এই বস্তু হতে পারে দেশের জন্য অপার সম্ভাবনাময় খাত। ই-বর্জ্য তেমনি একটি খাত। ৩০ ডিসেম্বর দৈনিক মানবকণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদে বলা হয়েছে, নষ্ট ইলেক্ট্রনিক পণ্য শুধু বর্জ্য নয়, হতে পারে মূল্যবান সম্পদ। দক্ষতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করা গেলে বাতিল ইলেক্ট্রনিক পণ্য থেকেই মিলতে পারে সোনা, রূপা, তামা, প্লাটিনামসহ মূল্যবান ধাতব উপাদান। দেশে সীমিত পরিসরে ই-বর্জ্য (ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য) রিসাইকেল হলেও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও দক্ষতার অভাবে মূল্যবান ই-বর্জ্য চলে যাচ্ছে বিদেশে। অথচ উদ্যোগ নিলেই দেশেই গড়ে তোলা সম্ভব ই-বর্জ্য রিসাইকেল কারখানা। সঠিক নীতিমালার ভিত্তিতে তা সম্ভব হলে ই-বর্জ্য রফতানি না করে দেশেই এর একটি অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকে না জানার কারণেও সীমিত আকারে যারা ই-বর্জ্য রিসাইকেল করার দায়িত্ব নিয়েছেন তারাও প্রয়োজনীয় বর্জ্য পাচ্ছেন না। অথচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বর্জ্য বিদেশে চলে যাচ্ছে।

ইলেক্ট্রনিক পণ্যে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল মেশানো থাকে। পণ্যটি নষ্ট হয়ে গেলে আমরা তা অবহেলায় ফেলে রাখি। ক্ষতির বিষয়টি ভেবেও দেখি না। কিন্তু ই-বর্জ্যে যেসব কেমিক্যাল অবশিষ্ট থাকে তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ব্যাপারটি নিয়ে এখনো তেমন আলোচনা না হওয়ায় সাধারণ মানুষ সচেতনও নয়। যে কারণে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে ব্যবহারের অযোগ্য এসব ইলেক্ট্রনিক পণ্য। এগুলো মাটির সঙ্গে না মেশায় পরিবেশ ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। এজন্য খুব শিগগিরই আলাদা আইনের মাধ্যমে এসব ই-বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং রিসাইকেলের ব্যাপারে জোর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

এশিয়া মহাদেশের উন্নত দেশ যেমন- জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াতে প্রায় ২০০০ সালের দিকেই ই-বর্জ্য রিসাইকেলের কাজ শুরু করে। এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতও ই-বর্জ্য রিসাইকেল করে যথেষ্ট এগিয়ে গেছে। তারা মূলত ইপিআর মডেলের ওপর ভিত্তি করে রিসাইকেলের কাজ করে। শুধু তাই নয়, এসব বর্জ্য থেকেও আহরণ করা হয় সোনা, রুপা, তামার মতো মূল্যবান ধাতব পদার্থ। বাংলাদেশও সহজে এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার ভিশন রয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের। ই-বর্জ্য রিসাইকেল আমাদের দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাওয়ার পথে দারুণ ভূমিকা রাখছে। আরো বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে যথাযথ পদক্ষেপ নিলে। সোনা, রুপা, সিসা আহরণ ছাড়াও স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকি প্রতিরোধের জন্য ই-বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সেলফোন সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা মোট ১২৮.৯৩৯ মিলিয়ন অতিক্রম করেছে। সুতরাং আগামী কয়েক বছরে এসব ফোনের মেয়াদ শেষ হলে দেশে কী পরিমাণ ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য জমা হবে সহজেই বোঝা যায়। অন্যদিকে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার (ইএসডিও) এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, বাল্ব, থার্মোমিটার, চিকিৎসা ও ডেন্টাল বর্জ্য থেকে ১২৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হয়। সুতরাং প্রয়োজন শুধু সঠিক সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত এবং কার্যকর উদ্যোগ। আশাকরি, সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ রয়েছে।

 

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি