Image

খ্রিস্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা

সময় চলে যায় সময়ের আবর্তে। কারো জন্য সে অপেক্ষা করে না। কারো আনন্দ-বেদনা-বিষাদে কিছু যায় আসে না। সে চলে আপন গতিতে। তেমনিভাবে মহাকালের আবর্তে হারিয়ে গেল আরো একটি খ্রিস্টীয় বছর। আজ ১ জানুয়ারি। খ্রিস্টীয় হিসাবে আরেকটি নতুন বছরের শুরু। স্বাভাবিকভাবেই একবার পেছন ফিরে দেখার তাগিদ কাজ করে সবার মধ্যে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়েই মানুষের জীবন। বিগত বছরে পাওয়া-না পাওয়ার হিসাবটাই তাই আগে চলে আসে।

রাজধানীজুড়ে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা অনেক অমূল্য প্রাণ হারিয়েছি। সড়ক কেড়েছে একের পর এক প্রাণ। এ ছাড়াও আমাদের অনেক গুণীজন, প্রিয়জন এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। ইচ্ছে থাকলেও সংসদে আসা হয়নি সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের। তিনি শপথ না নিয়েই না-ফেরার দেশে চলে গেলেন আবার শপথ নিয়েও সংসদে কথা বলা হয়নি বিরোধীদলীয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের।

নুসরাত-রিফাতের র্নশংস হত্যাকাণ্ডও আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে গেল বছরে। বছরজুড়েই অস্থিরতায় কেটেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। নিয়োগ-দলীয়করণ, শিক্ষার বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় গেছে। ভিসি কাণ্ডে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর এবং গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সারা বছরই ছিল মিডিয়ার সাবজেক্ট। আর শিক্ষাঙ্গনে সারা বছরই নানারকম খারাপ খবরের শিরোনামে থেকেছে ছাত্রলীগ। লিচু চুরি থেকে ধর্ষণ, খুন, নির্যাতন, শিক্ষককে পুকুরে ছুড়ে ফেলা- কিছুই বাদ দেয়নি তারা। বুয়েটে আবরারকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা সব নৃশংসতাকে যেন হার মানিয়েছে।

বছর শেষে রাজাকারের তালিকা নিয়ে ঘটেছে ন্যক্কারজনক ঘটনা। রাজাকারের তালিকা তৈরির নামে যে প্রহসন করা হয়েছে তা পক্ষান্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানের নামান্তর। যদিও মন্ত্রণালয় তালিকাটি স্থগিত করেছে। তবে রেশ সহজে কাটার নয়। অদূর ভবিষ্যতে এই তালিকা ধরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার বসালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বিগত বছরে ক্যাসিনো কাণ্ড ছিল আলোচিত ঘটনার অন্যতম। এই ঘটনার মাধ্যমে নতুন এক দুষ্ট চক্রের আবির্ভাব সম্পর্কে জেনেছে মানুষ। সারাদেশে দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানে যখন রাজনীতির মাঠ টালমাটাল তখন সংসদেও এর আঁচ লাগে। কয়েক সংসদ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দের মধ্য দিয়ে কালিমা লাগতে থাকে একাদশ সংসদের গায়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির রিুদ্ধে জিরো টলারেন্সে যেভাবে দলীয় লোকজনের টুঁটি চেপে ধরতে শুরু করেছিলেন তা প্রশংসার দাবি রাখে। একইসঙ্গে তার সততা এবং সাহসিকতার পরিচয়ও বহন করে এই ঘটনা। তবে কিছুদিনের মধ্যে এই অভিযান থেমে যাওয়ায় বা গতি ধীর হওয়ায় জাতি অনেকটা হতাশ। অন্যদিকে দুর্নীতিও থেমে নেই বা বন্ধ হয়নি।

মাদকের বিরুদ্ধেও সরকারের জিরো টলারেন্স আকরাম হত্যাকাণ্ড বিতর্কে ম্লান হয়েছে অনেকটা। এত যে অভিযান, এত যে চেষ্টা তা সত্ত্বেও মাদক আসা বন্ধ নেই। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে নতুন সড়ক আইনও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বরং পরিবহন সন্ত্রাসীদের কাছে মাথা নত করে তাদের আরো সাত মাসের দীর্ঘ সময় দেয়া হয়েছে। অথচ এই আইন করার সময় পরিবহন খাতের শীর্ষদের সবার সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় তারা বাগড়া দিয়ে বসল।

এর মানে জনগণ সবার কাছে জিম্মি। গেল বছরের আরো একটি আলোচিত বিষয় পেঁয়াজের রেকর্ড পরিমাণ মূল্য বৃদ্ধি। এদেশের মানুষ কল্পনাও করেনি পেঁয়াজের এত মূল্য হতে পারে। পেঁয়াজ না খেলেও চলে। কিন্তু তাই বলে সীমা অতিক্রম করে মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা কোথাও পাওয়া যায়নি।

শুধু হারিয়েছি তা নয়। গেল বছর মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলতার সঙ্গে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলো এই স্যাটেলাইটের আওতায় সম্প্রচার শুরুও করেছে। আমাদের দেশের শিশুরা এ বছর আন্তর্জাতিক রোবটসংক্রান্ত প্রতিযোগিতায় অনেক সোনা-রুপা এবং ব্রোঞ্জপদক এনে দিয়েছে। ক্রিকেটে মেয়েরা এনে দিয়েছে একের পর এক সাফল্য। এভাবে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির পাল্লা মাপতে গেলে অনেক কিছুই আলোচনায় আনা যায়। তবে সব কিছু পেছনে ফেলে নতুন বছরে দেশ নতুন উদ্যোগে এগিয়ে যাবে আর জনগণ এর সুফল শতভাগ উপভোগ করতে পারবে-এই প্রত্যাশা আমাদের।

মানবকণ্ঠ/জেএস