Image

কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যু: দিতে হবে ক্ষতিপূরণ

লাখো কর্মীর হাত দেশকে নিয়ে যায় সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে। তাদের ঐকান্তিক পরিশ্রম তিলে তিলে গড়ে তোলে দেশের অর্থনীতির ভিত। দেশ এগিয়ে যায় নতুন নতুন ক্ষেত্রে। এর পেছনে কাজ করে শ্রমিকদের দক্ষ হাত। শ্রমিকদের সম্মিলিত প্রয়াস কর্মক্ষেত্রে আনে উজ্জ্বল সাফল্য। কিন্তু এই শ্রমিকরা যদি কর্মক্ষেত্রে কর্মব্যরত অবস্থায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে নিহত হন তাহলে এর পরিবার-পরিজনের কী হবে? এমন নিশ্চয়তাপূর্ণ বিধিবিধান আমাদের দেশে আছে কী? প্রকাশিত একটি সংবাদের কারণে আজ এই প্রশ্নগুলো জোরালো হয়ে দেখা দিয়েছে।

মানবকণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০১৯ সালে মোট ৯৪৫ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত ২৬৯ এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৬৭৬ জন। ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি-২০১৯’ শীর্ষক একটি বেসরকারি সংস্থার এ সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ওই সমীক্ষায় খাতভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে পরিবহন খাতে ২৯৪ জন, নির্মাণ খাতে ১৫৬ জন, পোশাক খাতে ৪০ জন শ্রমিক এবং কৃষি-শ্রমিক ৯৮ জন ও দিনমজুর ৪৯ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া ২৩ জন জাহাজভাঙা শিল্পে কর্মরত শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৫টি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর এবং বেসরকারি সংস্থা ওশি’র উদ্যোগে মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রতিটি জীবনের মৃত্যু অবধারিত। জন্ম নিলে মরতে হবে এটা অবধারিত। গতানুগতিক নিয়মে পরিণত বয়সে কোনো মানুষের ইহধাম ত্যাগ করা কোনো ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু কোনো মানুষ যখন সবাইকে কাঁদিয়ে অকালে পরপারে চলে যায় তখন মানুষের হৃদয়ে, বিশেষ করে নিকটজনদের মাঝে শোকের মাতম শুরু হয়। আর যদি সেটা হয় কোনো দুর্ঘটনা এবং ওই দুর্ঘটনাকবলিত মানুষটি যদি হয় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তাহলে স্বজনদের মাঝে নেমে আসে শোকের পাশাপাশি গভীর অনিশ্চয়তা। আবার আর সেই পরিবারে যদি থাকে নাবালক শিশু-সন্তান তাহলে অনিশ্চয়তার ঘোর আঁধার পরিবারটিকে আরো ঠেলে দেয় দুশ্চিন্তার কালো গহ্বরে।

প্রশ্ন হচ্ছে, একটি পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি যদি দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে মারা যান, তাহলে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এই সব শ্রমিকের মৃত্যুর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। তাদের অবশ্যই একটি নীতিমালা থাকা দরকার যে, কোনো শ্রমিক যদি কর্মরত অবস্থায় অথবা কর্মকালে মৃত্যুজনিত ক্ষতির শিকার হন তাহলে তার দায়দায়িত্ব এই প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে এবং এ বিষয়টা প্রাতিষ্ঠানিক খাতগুলোতে একটি জবাবদিহিতার আওতায় আনার কথা ভাবা উচিত। সেই অনুযায়ী সরকারকে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা জারি করার কথা ভাবা দরকার। তা না হলে দুর্ঘটনার শিকার ওই সব শ্রমিক পরিবারের যে বাঁচার কোনো পথ থাকে না- এটাই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ভাবতে হবে।

সরকার ও প্রশাসনকে অনেক সময় সড়ক দুর্ঘটনা ও অগ্নি-দুর্ঘটনার শিকার পরিবারগুলোকে অর্থ-সহায়তা দিতে দেখা যায়। এই সব সহযোগিতা বেশিরভাগ সময় মানবিক কারণে দেয়া হয়। তাছাড়া আদৌ কোনো নীতিমালার আওতায় দেয়া হয় বলে মনে হয় না।

প্রাতিষ্ঠানিক হোক আর অপ্রাতিষ্ঠানিক হোক- দুর্ঘটনার কারণে অকাল মৃত্যুর শিকার সব ধরনের কর্মীর পরিবারের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট নীতি থাকা দরকার। সেই সঙ্গে একটি এককালীন বরাদ্দ থাকা দরকার, যার ওপর ভিত্তি করে ওই পরিবারের সদস্যরা বেঁচে থাকবে ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে।

সরকার নানা খাতে নানা রকম ব্যয়-বরাদ্দ দিয়ে থাকে। নিয়ে থাকে নানা রকম জনহিতকর পরিকল্পনা। আমরা মনে করি, সরকার কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকপরিবারগুলোর সুরক্ষায় একটি নীতিমালা ও তহবিল গঠনের কথা ভেবে দেখতে পারে।

মানবকণ্ঠ/এইচকে