Image

দেশে বেকারত্ব কমাতে হবে

লাখো যুবকের কর্মের হাত একটি দেশকে নিয়ে যেতে পারে উন্নয়নের চ‚ড়ান্ত লক্ষ্যে। আর যদি ওই সব যুবকের সিংহভাগ থাকেন বেকার, তাহলে সুষম উন্নয়নের ধারা হবে ব্যাহত- এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। দেশের বেকার যুবকদের গতানুগতিক চিত্রসহ একটি পরিসংখ্যান উঠে এসেছে এক সংবাদে। মানবকণ্ঠে প্রকাশিত ওই সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। এত বিশালসংখ্যক বেকার শ্রেণি নিয়ে দেশে এখন চলছে হতাশার আক্ষেপ। দেশের উন্নয়নে এসব যুবককে মূলধারায় না আনলে প্রকৃত উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া স্বাভাবিক।

প্রকাশিত সংবাদের এক অংশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের চাকরির বাজারে প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লাখ চাকরিপ্রার্থী প্রবেশ করেন। তাদের মধ্যে ১০ থেকে ১১ লাখের চাকরির সংস্থান হয়। বাকিরা বেকার জীবনযাপন করেন। তাদের একটি অংশ দেশের বাইরে চলে যান। সবচেয়ে বিপাকে পড়ে যায় উচ্চ শিক্ষিত একটা শ্রেণি। বেকারদের বড় অংশই তারা। কারণ, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত কাজ নেই চাকরির বাজারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর হিসাবে বর্তমানে কর্মসংস্থানের বাজারে সরকারি চাকরি জোগান মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

তবে সরকারের অনেক প্রকল্প আছে, সেখানেও কিছু কর্মসংস্থান তৈরি হয়। সব মিলিয়ে সরকারি খাতে চাকরি মোট কর্মসংস্থান ১০ শতাংশের কম হওয়ার কথা ওই সংবাদে বলা হয়েছে।

দেশে কর্মসংস্থানের হার যদি মন্থর গতির হয়, লাখ লাখ কর্মক্ষম যুবক যদি বেকার থাকেন, তাহলে দেশের উন্নয়নে স্বাভাবিক গতিধারা তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। এজন্য শুধু দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ না করে কর্মমুখী উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে হবে। কর্মসংস্থান যেসব খাতে তৈরি হবে, সেসব খাতকে অগ্রাধিকারভিত্তিক বিবেচনায় নিয়ে উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে; যেন কলকারখানা বিনির্মাণে শুল্ক ছাড়, ভর্তুকি, বন্দরভিত্তিক সুবিধা- এসব ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। এতে কর্মসংস্থানের খাতগুলো আরো প্রসারিত হবে।

বিআইডিএসের এক অর্থনীতিবিদের মতে, এ দেশ থেকে প্রতি বছর পাঁচ থেকে ছয় বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স চলে যায় বিদেশে। আর প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন ১৬ বিলিয়ন ডলার। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় কী পরিমাণ বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত। এদের মধ্যে আবার অনেক বিদেশি অবৈধভাবে কর্মরত আছেন; তাদের বেশিরভাগ আবার হুন্ডির মাধ্যমে নিজেদের উপার্জিত অর্থ নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেন। এর ফলে আমাদের দেশ ওই সব বিদেশির কাছ থেকে ন্যূনতম করগুলো আদায় করা থেকেও বঞ্চিত হয়।

আমাদের দেশের কর্মীরা যেমন বিদেশে যান, তেমনই বিদেশি কর্মীরাও এ দেশে আসেন- এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যে দেশে লাখো বেকারের আর্তনাদ, সে দেশে আগে নিজেদের বেকারত্ব নিয়ে ভাবতে হবে। যেখানে বিদেশিদের সুযোগ না দিলে আমাদের উন্নয়ন ব্যাহত হবে, সেসব খাতে দক্ষ বিদেশিদের অবশ্যই সুযোগ দিতে হবে। তবে পাশাপাশি এটাও ভাবতে হবে, স্বদেশি বেকারদের দক্ষ করে গড়ে তুলে কী করে ওই সব স্থান পূরণ করা যায়। বেকার সমস্যা দেশের বড় সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে বহুমুখী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আমরা মনে করি, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল বেকারদের নিয়ে আরো ভাববে, নতুন নতুন পদক্ষেপ নেবে- নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে উন্নয়নের শীর্ষ শিখরে।

মানবকণ্ঠ/এইচকে