Image

ধর্ষণ প্রতিরোধে আরো কঠোর হতে হবে

ধর্ষণ একটি জঘন্যতম অপরাধ। এই অপরাধের শিকার বেশিরভাগ নারী সারাক্ষণ মনোকষ্টে ভোগেন। তাদের এই আত্মযন্ত্রণা বাকি জীবন কিছুতেই মন থেকে মুছতে পারেন না। তাই ঘৃণায় তিলে তিলে নিজেকে নিজের মধ্যে যেন বারবার হত্যা করেন। কেউ আবার শেষ সিদ্ধান্ত হিসেবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। লক্ষণীয় বিষয়, এই অপরাধ দেশে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে গেছে। এই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক মানবকণ্ঠে।

 

 

 

 

 

প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যা ২০১৮ সালে ছিল ৭৩২ জন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক বাস্তবতায় ধর্ষণ কখনো কখনো অনিবার্য পরিণতি। আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা, পরিবেশসহ নানা কারণে কখনো কখনো ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে যায়। আইনি দুর্বলতার সুযোগে কিছু অসামাজিক চেতনার জঘন্য পুরুষের লালসার শিকার হয়ে নারীরা ধর্ষিত হন। এ জন্য কারণ অনুসন্ধান করে কঠোর শাস্তির বিধান ধর্ষণ প্রতিরোধে বেশি সহায়ক হতে পারে।

সমাজে নানা বয়সী নারী ধর্ষণের মধ্যে শিশু ধর্ষণকে বেশি অমানবিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিছু মধ্যবয়সী পুরুষ যখন শিশুর ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত হয়, তখন সমাজে মানুষের মাঝে ঘৃণা প্রকাশের মাত্রা বেড়ে যায়। অনেক সময় মানুষ সোচ্চার হয়ে বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামে, মানববন্ধন করে। তখনই দেশের আইনি শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতার দিকে নজর পড়ে সাধারণ মানুষের।

সমাজে আরেক ধরনের ধর্ষণ বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, বিশেষ করে অল্প বয়সী বালিকারা যখন ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তখন সমাজে আলোচনার ঝড় ওঠে। একদিকে ধর্ষণের মনোবেদনা অন্যদিকে আবার আত্মহত্যা- এই দুই অপরাধ একসঙ্গে সমাজের সচেতন মানুষকে আলোড়িত করে বেশি। একশ্রেণির বখাটের কারণে এই ধরনের ধর্ষণজনিত আত্মহত্যা বেশি ঘটে। কোনো কোনো সময় এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব লুক্কায়িত থাকে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক আত্মীয়ের কারণে বখাটেরা এই ধরনের ধর্ষণের দুঃসাহস দেখায়। তারপর আবার অপরাধীদের আইনি প্রক্রিয়া থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে চলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোর প্রচেষ্টা।

সমাজের আরেকটা শ্রেণি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা তৈরি করে। ধর্ষণ না করেও আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় নিরপরাধ কথিত অভিযুক্তকে। দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হয়েও যেন মামলার শেষ হয় না। অবশেষে যেন দুরভিসন্ধির অধিকারী সমাজের কুচক্রীরাই একধরনের সফলতা পায়। এসব ধর্ষণ মামলার অভিযুক্তরা অধিকাংশই বিচারে খালাস পেলেও হয়রানি থেকে বাঁচতে পারেন না। কোর্টের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় বছরের পর বছর।

ধর্ষণের মতো অপরাধ সমাজ থেকে কমাতে হলে দরকার সঠিক আইনি তদন্ত। তারপর অভিযুক্তদের দ্রূত বিচার। এক বছরের ব্যবধানে ধর্ষণ দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে যাওয়া আমাদের বিচারব্যবস্থা ও আইনি প্রক্রিয়ার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে। এ জন্য এখনই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সজাগ হতে হবে। সেই সঙ্গে যে কোনো মূল্যে এই সামাজিক অপরাধ নির্মূলে তৎপর হতে হবে। প্রয়োজনে সময়োপযোগী আইন তৈরি করতে হবে, যেন অপরাধীরা দ্রূত শাস্তি পায়- এটাই সবার কামনা।

 

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি