Image

উত্তাল ক্যাম্পাস: ধর্ষককে কঠোর শাস্তি দিতে হবে

রাজধানীতে একটি ধর্ষণের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা উত্তাল হয়ে উঠেছে। ঘটনার শিকার ওই তরুণী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী। এই ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। অনেকের প্রশ্ন, খোদ রাজধানী শহর ঢাকায় যদি ধর্ষকরা এমন দুঃসাহস দেখায়, তাহলে দেশের অন্যান্য এলাকার কী হবে?

ধর্ষণের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকে দিনভর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। শাহবাগ ও কুর্মিটোলায় অবরোধসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। গতকাল সারাদিনও এ নিয়ে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস।

কুর্মিটোলার ওই সড়কে রোববারের ধর্ষণের ঘটনাই প্রথম নয়। বনানী থেকে শুরু করে মাইলখানেক এই বিমানবন্দর সড়কে আগেও ঘটেছে অপরাধমূলক নানান কাণ্ড। সেই তালিকায় রয়েছে ২০১৬ সালে গারো তরুণী ধর্ষণ। রয়েছে পরের বছর কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর লাঞ্ছনার ঘটনা। আর চুরি-ছিনতাই তো হরহামেশা হয়েই থাকে। এসব ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে এখান থেকে বাসস্টপেজ সরানোর দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এই এলাকা এখনো ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে গেছে।

ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট কুর্মিটোলার যেখানে ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সেখানকার ঝোপের মধ্য থেকে ওই শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ের বই, রিংসহ চাবির ছড়া, ইনহেলার ও ঘড়ি উদ্ধার হয়েছে। ওই ঘটনার আগে ও পরে অনেক কিছুই ঘটেছে। ধর্ষণকারীর সঙ্গে ছাত্রীর ধস্তাধস্তিও হয়েছে। কিন্তু কেউ দেখতেও পেল না সেসব ঘটনা।

একজন মেধাবী ছাত্রীকে খোদ রাজধানীর মতো একটা জায়গায় ধর্ষিতা হতে হলো। হারাতে হলো জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সত্তা- একজন নারীর অমূল্য সম্পদ সম্ভ্রম। এখন শিক্ষার্থীদের দাবি, ওই জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে হবে। পুলিশ যেন সবসময় কর্তব্যরত থাকে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। সেই সঙ্গে ওই অপরাধীকে অবশ্যই খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে; যেন ভবিষ্যতে অন্য অপরাধীরা এই ধরনের গর্হিত অপরাধ সংঘটনের সাহস না দেখায়। সেই সঙ্গে আগামীর প্রস্তুতি হিসেবে অপরাধপ্রবণ এমন সব এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ও পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করতে হবে।

গতকাল দৈনিক মানবকণ্ঠে ধর্ষণ বিষয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। ওই সম্পাদকীয়র এক অংশে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যা ২০১৮ সালে ছিল মাত্র ৭৩২ জন। এক বছরের ব্যবধানে ধর্ষণ বেড়েছে দ্বিগুণ। এই তথ্য মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের। এই পরিসংখ্যান অবশ্যই দেশজুড়ে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার চিত্রকে স্পষ্ট করে।

এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাকে আর বিচ্ছিন্নভাবে দেখার অবকাশ নেই। ওপরের পরিসংখ্যানটি ধর্ষণের প্রকৃত বাস্তবতাকে আরো এক ধাপ উজ্জ্বল করেছে সচেতন মানুষের মাঝে। ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ যে দিনে দিনে বাড়ছে, তা আর অস্বীকার করার অবকাশ নেই।

সমাজ থেকে ধর্ষণ নির্মূল করতে হলে দরকার সুষ্ঠু আইনি তদন্ত এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক দ্রুত বিচার। এ জন্য আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের আরো সচেতন হতে হবে। ধর্ষণের এই ঘৃণ্য প্রকোপ থেকে নারী সমাজকে সুরক্ষা দিতে হলে কঠোর শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুর্মিটোলার ওই ধর্ষণের ঘটনার দুর্বৃত্তকে আটক করে এখান থেকেই শুরু করবে ধর্ষক নির্মূলের কঠিন পদযাত্রা।

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি