Image

পোলট্রি মুরগিতে ক্ষতিকর উপাদান রুখতে হবে

প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস হলো মাছ, মাংস ও ডিম। তার মধ্যে আমাদের দেশে আমিষের চাহিদা বেশি নিবারণ করে পোলট্রি ফার্মে উৎপাদিত মুরগি ও ডিম। সহজ লভ্য মুরগি ও ডিম দামে সস্তা হওয়ায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে থাকে। সেই আমিষ জাতীয় খাদ্যে যদি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকে, তাহলে মানুষ বিশুদ্ধ আমিষ জাতীয় খাদ্য পাবে কী করে?

মানবকণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, বাড়তি মুনাফার আশায় খামারিরা ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা বড় করতে, ওজন বৃদ্ধির জন্য অস্বাভাবিক খাবার দিচ্ছে। এই উপাদানটির নাম হচ্ছে এনবিএন, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের আয়ের পরিসীমা সীমিত পর্যায়ের। এসব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ যাবতীয় খাদ্য গ্রহণযোগ্য মাত্রার মূল্যে কিনতে ইচ্ছা পোষণ করে কিন্তু বাস্তবিক কারণে অনেকে স্বল্প মূল্যে পরিমিত খাবার সংগ্রহ করতে পারে না। বিশেষ করে মাংস ও ডিম জাতীয় খাবার আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশি মুরগি ও দেশি মুরগির ডিম গত এক দশকে ঊর্ধ্ব মূল্য ধারণ করেছে বেশি। মানুষের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় দেশি মুরগি ও ডিমের মূল্য দিনে দিনে বেড়ে গেছে।

শরীরের গঠনের জন্য সুষম খাদ্য খেতে হয় সবাইকে। যাদের শরীর সন্তোষজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না তাদের রোজই খেতে হয় আমিষ। তবে বয়স ২১ পেরিয়ে গেলে প্রতিদিন ৮০ গ্রামের বেশি মাংস খাওয়া উচিত নয়। কারণ মাংসে প্রচুর নাইট্রোসোমাইন থাকে যা লিভার ও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর।

মানুষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ও যুগের প্রয়োজনীয়তায় বৈজ্ঞানিকদের ভাবনা নতুন রূপ পেয়েছে দ্রুত বর্ধনশীল আমিষ জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে। ফার্মে পালন করার জন্য উচ্চবর্ধনশীল মুরগির নব সংস্করণ তার ধারাবাহিক আবিষ্কারের ফসল। এর ফলে স্বল্প সময়ে পোলট্রি জাতীয় মুরগি ফার্মে পালন করে সহজে বড় করা যায়। আর দামেও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় মানুষ পেয়ে যায় কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান মানুষের বিপুল চাহিদার বিপরীতে আমিষ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করা যেহেতু কঠিন হয়ে গিয়েছিল, তারই ঘাটতি নিবারণে বৈজ্ঞানিকদের এই উদ্ভাবন হলেও স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে এই আবিষ্কার। এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের অশুভ ইচ্ছা ও তথাকথিত বৈজ্ঞানিকদের আরেক আবিষ্কার অতি বর্ধনশীল রাসায়নিক উপাদান; যা পোলট্রি মুরগিকে অতি অল্প সময়ে বড় করে তুললেও মানবদেহের জন্য হচ্ছে অতি ক্ষতিকর। এই উপাদানটি তারা ব্যবহার না করলেও সুষ্ঠুভাবে লাভজনক অবস্থায় পোলট্রি শিল্প এগিয়ে যাচ্ছিল। পূরণ হচ্ছিল জনমানুষের চাহিদা। মাঝখানে আরেকটি উপাদান এই শিল্পে ব্যবহার করায় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ পূরণ হলেও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বিপজ্জনক পর্যায়ে।

এমনিতে পোলট্রি মুরগির জন্য ব্যবহৃত খাবার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক। কারখানাজাত এসব খাবার তৈরিতে রাসায়নিক মিশে যাওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। তারপর আবার নতুন আরেকটি রাসায়নিক কেবল অল্প সময়ে ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা এই শিল্পকে ধ্বংসেরই নামান্তর। আমাদের সচেতন হতে হবে এখনই। বেশি মুনাফার আশায় যেন কোনো ব্যবসায়ী ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশাতে না পারেন সেদিকে সরকারকে নজরদারি বাড়াতে হবে। পোলট্রি শিল্প গণমানুষের আমিষ চাহিদার ভরসাস্থল হোক- এই প্রত্যাশা আমাদের।

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি