Image

জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়াতে হবে

জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার সর্বসাধারণের কাছ থেকে অর্থ আহরণের সুযোগ পায়। সাধারণ মানুষও নিজেদের সঞ্চিত অর্থ নিরাপদে রাখতে এবং এ খাতে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে। কিন্তু সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি অনেকটা কমে গেছে।

মানবকণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকার। আগের বছর একই মাসে বিক্রি হয় ৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। এ ছাড়া ধারাবাহিক হিসাবে ধরলে একই অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে ৫ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময় এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এ বছর সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগের বছরের চেয়ে ৭৩ শতাংশ কমে গেছে। এসব তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, এক বছরের ব্যবধানে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই হার কমে যাওয়ার কারণগুলো কী? কেন এ অর্থবছরের এক মাসের সঙ্গে বা পাঁচ মাসের সঙ্গে, অন্য অর্থবছরের এক মাসের বা পাঁচ মাসের বিক্রির ব্যাপক ব্যবধান তৈরি হচ্ছে?

সরকার এ খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করেছে। ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বাধ্যতামূলক করেছে। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এছাড়া ডাটাবেইজে তথ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। মূলত দুর্নীতির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে সরকার ক্রেতাদের এসব তথ্য সংরক্ষণ করছে।

এসব প্রক্রিয়াকে সাধারণ ক্রেতারা জটিল মনে করছে। যার ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার বিগত দিনগুলোতে কমে গেছে। এছাড়া আরেকটি শ্রেণি নিজেদের আয়ের উৎস আড়াল করতে এসব বিধিবিধানের আওতায় আর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করছে না। অর্থনীতি খাতের অনেকের মতে, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল টাকা আয় করেছে তারা আর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করছে না। তাছাড়া অপ্রদর্শিত আয়ের মালিকরাও সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা থেকে মুখ ফিরিয়েছে।

সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে এবং উৎসে কর না বাড়িয়ে সঞ্চয়পত্র নীতিমালা করা হলে নিরীহ শ্রেণির মানুষ এই খাতে অর্থ বিনিয়োগ করত। বিশেষ করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা সবখানে নিজেদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে না তারা সাধারণত সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে নিজেদের অর্থকে একদিকে নিরাপদে রাখে, অন্যদিকে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখে। কিন্তু অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের রুখতে সরকারের নতুন নীতিমালার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি আশঙ্কাজনক মাত্রায় কমে গেছে।

সরকার প্রতি বছর বাজেটে এই খাত থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করত। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্য ছিল সরকারের। বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সরকারের এ খাতের ঋণ আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা বেশি। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার পেয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

কিন্তু বিক্রয়ের মাত্রা যদি কমে যায়, তাহলে সরকার আর আগের বছরগুলোর মতো ঋণ নিতে পারবে না। যার ফলে জাতীয় বাজেটে ঘাটতির মাত্রা বাড়বে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই নিম্নহার নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। নীতিমালার কারণে যদি সমাজের মূলধারার মানুষগুলো সঞ্চয়পত্র কেনা থেকে বিমুখ হয় তাহলে সরকারেরও আয় কমে যাবে- এটা অস্বাভাবিক নয়। তাই সরকারকে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রির নীতিমালা নিয়ে, যে নীতিমালা সরকার ও সাধারণ সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের সহায়ক হয়- আমরাও মনে করি তাই।

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি