Image

সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভাবতে হবে

বন্ধপ্রতিম দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার পেছনে তাদের অদ্বিতীয় অবদান। ভারতের ঐকান্তিক সহযোগিতা ছাড়া এই দেশ স্বাধীন করা হতো আরো কষ্টকর। এক কোটি মানুষকে আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসাসহ যাবতীয় সহায়তা দিয়ে যে দেশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এদেশ থেকে পাক সেনাদের পরাজিত করে তাড়াতে সহায়তা করল, সে দেশের সীমান্ত বাহিনীর হাতে যদি বেঘোরে প্রাণ হারায় এই স্বাধীন দেশের মানুষ, তাহলে বাংলাদেশিরা এই মনোকষ্ট কোথায় রাখবে?

মানবকণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে ২০১৯ সালে সীমান্তে ৪৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গুলিতে ৩৭ জন এবং নির্যাতনে ছয় জন। ২০১৮ সালে নিহত হয়েছে ১৪ জন। এই হিসাবে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে তিন গুণ। কিন্তু সরকারি হিসাব ধরলে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে সীমান্ত হত্যা বেড়েছে ১২ গুণ। আর যা-ই হোক সীমান্ত হত্যা যে অনেক গুণ বেড়েছে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কোনো বিদেশি নাগরিক যদি বেআইনিভাবে সীমান্তরেখা অতিক্রম করে, তাহলে প্রথমত তাকে গ্রেফতার করার বিধান রয়েছে। আর সীমান্ত অতিক্রমকারী ব্যক্তি যদি অবৈধ অস্ত্রধারী হয়, সেই সঙ্গে বিপজ্জনক আচরণ করে তাহলে তাহলে যে কোনো দেশের সীমান্তরক্ষী গুলি চালাতে পারে, আহত করে আটকের লক্ষ্যে। কোনোভাবে কোনো দেশের কোনো সীমান্তের রক্ষীরা হত্যার উদ্দেশ্যে সরাসরি গুলি চালাতে পারে না। যদি চালায় তাহলে সেটা হবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে স্বাধীনতার পর যত সীমান্ত হত্যা হয়েছে, তার মধ্যে বেশিরভাগই সরাসরি গুলি করে হত্যা। আর এসব হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে সিংহভাগই বাংলাদেশি এবং তারা নিরীহ গরু ব্যবসায়ী। তাদের কাছে বিপজ্জনক অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে এই পর্যন্ত বড় কোনো নজির দেখা যায়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বন্ধপ্রতিম এই দেশটির নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ কেন সীমান্তে গুলি চালানোর নীতি অবলম্বন করছে?

সীমান্ত এলাকাগুলো এমনিতেই অপরাধপ্রবণ হয়। দিনের বেলায় এক দেশের মানুষ আরেক দেশের গবাদিপশু সুযোগ বুঝে ধরে নিয়ে যায়। রাতের বেলায় চুরি-ডাকাতি করতেও তারা সীমান্ত অতিক্রম করে। শুধু তাই নয়, নিত্যপণ্যের সাধারণ চোরাচালানসহ ভয়ানক মাদকের বড় চোরাচালানও রাতের আঁধারে হয়ে থাকে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত কতটা অপরাধপ্রবণ তা স্পষ্ট হয়েছে গরু চোরাচালানিদের হত্যার মাধ্যমে। এ যাবত যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এর বেশিরভাগ গরু ব্যবসায়ী।

সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি শুধু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়েই রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকেও দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ঢাকায় দুই দেশের সীমান্ত সম্মেলনেও এই সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়। কিন্তু তা বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না। সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বাড়ছে বৈ কমছে না।

এখন দুই দেশের কর্তৃপক্ষের উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। এই সম্পর্ক অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় গভীর। তার পরও যদি সীমান্তের মানুষকে প্রাণ হারাতে হয় তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। আমরা মনে করি, দুই দেশের সরকারকে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আরো বাড়বে দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা।

মানবকণ্ঠ/এইচকে