Image

উপাচার্যদের অনিয়ম থেকে দূরে থাকতে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এসব বিদ্যাপীঠের সর্বোচ্চ মর্যাদাধারী এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান হলেন ভাইস চ্যান্সেলর বা উপাচার্যরা। তারা যদি অনিয়ম-দুর্নীতিতে ছড়িয়ে যান, তাহলে নিষ্কলুষ শিক্ষার আলোর প্রদীপ জ্বালাবেন কারা?

উপাচার্যদের দুর্নীতির বিষয়টি আরো পুরোনো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে স্বয়ং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির মুখে উঠে এসেছে এই আক্ষেপের কথা।

মানবকণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, গত শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন ভাষণে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, উপাচার্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আপনারা নিজেরাই যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন বা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে, তা ভেবে দেখবেন।

সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠায় তাদের সচেতন হতে বলেছেন। দেশের সেরা মেধাবীরা নানামুখী প্রতিযোগিতা পেরিয়ে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির সুযোগ পান। তারাই পড়াশোনার পর্বগুলো পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা সনদ নিয়ে দেশ সেবায় বেরিয়ে যায়। তাদের মধ্যে যারা আরো মেধাবী, বছর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোয় ভালো ফল করেন, বিভাগীয় পরীক্ষাগুলোয় যারা উচ্চ নম্বর তুলে সেরাদের সেরা হন এবং যারা বিভিন্ন গবেষণাপত্র রচনা করে সাফল্য দেখান, তারা হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

পর্যায়ক্রমে প্রজ্ঞায়, মেধায়, বহুমুখী জ্ঞানে যারা আগুয়ান, তারাই হন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এরপর অধ্যাপনায় নানা স্তর ডিঙিয়ে, বিশেষ করে সহকারী, সহযোগী অধ্যাপকের স্তরগুলো পেরিয়ে তারপর হন পরিপূর্ণ অধ্যাপক। শত শত অধ্যাপকের ভিড়ে তাদের মধ্য থেকে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারীদের উপাচার্য পদের জন্য মনোনীত করা হয়। স্বয়ং রাষ্ট্রপতি হন আচার্য আর ওই সব মেধাবী অধ্যাপকদের করা হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এই সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিতরা যদি দুর্নীতিতে জড়িয়ে যান, প্রশ্নবিদ্ধ হন নানা অনিয়মের কারণে। তাহলে জাতির ভাবমূর্তি যে কলুষিত হয়ে যায়- এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, একজন দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে যখন সচেতন শিক্ষক সমাজ ও ছাত্রছাত্রীরা মিছিল-আন্দোলনে নেমে পড়েন, রাস্তা অবরোধ করেন, ঘেরাও করেন উপাচার্যের কার্যালয়- কোনো কোনো দায়িত্বশীল মহল তখনও সচেতন হয় না। বরং অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতির রং লাগিয়ে উল্টো উপাচার্যের পক্ষ নিতে দেখা গেছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা অংশকে। উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে কোনো কোনো প্রতিবাদকারী মহলকে। নানা রকম তথ্য-প্রমাণ নিয়েও তারা সর্বসম্মুখে প্রতিবাদ করে সুষ্ঠু তদন্ত আদায় করতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।

উপাচার্যদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুশোচনা অবশ্যই সমাজচিত্রের অংশ। এই ধরনের পদে অধিষ্ঠিতরা যদি কলুষিত হয়ে যান, তাহলে জাতির গর্ব করার জায়গাগুলোতে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এজন্য অভিযুক্তদের অব্যাহতি দেয়াই সর্ব উত্তম পন্থা বলে অনেকেই মনে করেন। দুই-একজন অধ্যাপককেই যে উপাচার্য পদে লম্বা সময় থেকে যেতে হবে-এমন তো কথা নয়। সরকার অভিযোগের শিকার কয়েকজন উপাচার্য আন্দোলনের মুখে সরিয়ে নিয়েছে- এমন নজিরও আছে। তবে আমরা মনে করি, গুরুত্বপূর্ণ এই সব উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়ার আগে ব্যক্তিত্ববান মেধাবী অধ্যাপকদের মনোনীত করাই উত্তম। যেন রাজনৈতিক রঙে কোনো অযোগ্য ব্যক্তি এই মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ না পায়- সেটাই হবে উত্তম।

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি