Image

কৃষিপণ্য পাটে রফতানি সাফল্য

পাট রফতানিতে এ দেশের আছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেই সময় পাটই বিশ্বে তুলে ধরেছিল এই দেশের রফতানির পরিচিতি। সেই ব্রিটিশ শাসন আমল থেকে রফতানি পণ্যের বহরে অনন্য হয়েছিল পাট।

কালক্রমে নানা প্রতিক‚লতার কারণে হারিয়ে গিয়েছিল সেই ঐতিহ্যবাহী ধারা কিন্তু মানবকণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদে নতুন করে আশা জাগিয়েছে সেই পাট। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, এ বছর সার্বিক রফতানি আয় অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ধীর অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয় বেড়েছে অনেকটা উল্লেখ করার মতো।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এই খাত থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৫১ কোটি ৭১ লাখ ইউএস ডলার; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ছয় মাসে পাটে রফতানি আয় হয়েছিল ৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এই অগ্রগতির মাত্রাকে অনেকটা সন্তোষজনকই বলা যায়। দেশের অন্যান্য রফতানি খাত যখন আস্তে আস্তে স্থবির হয়ে পড়ছে, ঠিক সেই সময় একবারে হারিয়ে যাওয়া একটি খাত আবার নতুন করে উল্লেখ করার মতো ভ‚মিকায় চলে আসছে। এই উঠে আসাকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

এক সময় দেশ প্রচুর পাট রফতানি করত। বেশিরভাগ বৈদেশিক মুদ্রা আসত পাট রফতানি থেকে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ পাট চাষে মনোনিবেশ করেছিল। এভাবে সময়ের পথ-পরিক্রমায় পাট হয়ে যায় সোনালি আঁশ। আর এ কারণে দেশের প্রধান পাট রফতানি কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জকে বলা হতো প্রাচ্যের ড্যান্ডি। এই নারায়ণগঞ্জ থেকে পানিপথে জাহাজে করে পাট চলে যেত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আমাদের দেশের পাটের মূল্যমান অন্যান্য দেশের চেয়ে উত্তম হওয়ায় সেই সময় বহির্বিশ্বে চাহিদাও ছিল বেশি।

পাটের চাহিদা ও সুনাম যখন তুঙ্গে, সেই সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ওজন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাটের বেলে পানি মেশাত। এতে পাটের মান রফতানিস্থলে পৌঁছানোর আগে পচে নষ্ট হয়ে যেত। ফলে বিদেশি ক্রেতারা আস্তে আস্তে এ দেশ থেকে পাট কেনা বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেকে এই অবস্থাকে প্রতিযোগী দেশের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেছেন। আমাদের পাটের সুনাম নষ্ট করতে এবং নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে এদেশীয় দুর্বৃত্তদের দিয়ে পাটের মান নষ্ট করিয়েছে একটি সুযোগসন্ধানী মহল।

এজন্য অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের পাটের বিদেশি বাজার সমুন্বত থাকলেও আমরা হারিয়েছিলাম নিজেদের অবস্থান। বর্তমান সরকারের আমলে হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পাটচাষি ও পাটপণ্য উৎপাদকারীদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে মোটা অঙ্কের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। পাটপণ্য রফতানিতে বিদেশি বাজার নতুন করে অনুসন্ধান করা হয়েছে। সার্বিকভাবে এ কারণে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়ে গেছে আশাতীতভাবে।

রফতানি বহুমুখীকরণের আওতায় পাটকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একক কোনো রফতানিপণ্যের ওপর নির্ভরতা না রেখে রফতানিকে বহুমুখী করাই উত্তম বলে অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত। এতে বড় কোনো রফতানিপণ্য বাজার হারালেও অন্য রফতানিপণ্য সেটাকে সামাল দিতে সহায়ক হতে পারে। দীর্ঘ বিরতির পর বিদেশে পাট ও পাটজাত পণ্যের আমদানি-চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পাটের ইতিবাচক ধারা আমাদের যে কোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে। রফতানিকারকদের সহায়তা দিতে হবে প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত দিকগুলোতে। তাহলে আমাদের পাট আরো এগিয়ে যাবে বহির্বিশ্বের উন্মুক্ত বাজারে। আর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতিতে, পাটচাষিদের মাঝে। পাট এগিয়ে যাক সাফল্যের ধারাবাহিকতায়- এই প্রত্যাশা আমাদের।

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি