Image

হারে শুরু বাংলাদেশের

মুজিববর্ষ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশাল উদ্যোগ। গুরুত্ব পেয়েছে ক্রীড়াঙ্গনও। অনেক আয়োজনের মাঝে যেখানে আছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপও। বাফুফের পক্ষ থেকে প্রথম আয়োজন। কিন্তু সেই আয়োজনে ছিল না কোনো বিশেষত্ব। খুবই সাদামাটা আয়োজন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শুরুটা হওয়ার প্রয়োজন ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। সেখানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের বাহির দেখে বুঝার উপায় নেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আয়োজন। অথচ এখানে হওয়ার প্রয়োজন ছিল বাহারি আয়োজন। বলা যায় অনেকটা সাদামাটা আয়োজনই যেন।

এমন কি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও ছিল না কোনো বাড়তি আয়োজন। শুধু বেলুন উড়ানো হয়। এই বেলুন উড়ানো যে কোনো খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই করা হয়ে থাকে। আয়োজনের এমন সাদামাটা অবস্থার মতোই ছিল উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ দলের খেলা। আয়োজনের সাদামাটা অবস্থার পরিবর্তন করা যেত মাঠের লড়াইয়ে ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে। কিন্তু সেখানেও হতাশ করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। হার দিয়ে শুরু করতে হয়েছে মুজিববর্ষে নিজেদের খেলা।

যেখানে তারা ২-০ গোলে হেরেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফিলিস্তিনের কাছে। উভয়ার্ধে একটি করে গোল করেন খালেদ সালেম ও লাথ খারোব। এ সব ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ হয় দর্শক উপস্থিতি চোখে না পড়াতে! বলা যায় বাফুফে মুজিববর্ষ শুরু করল ব্যর্থতার ঢালি সাজিয়ে।

ব্যর্থতার পসরা সাজানোর দিন সান্ত¡না ছিল বাংলাদেশ হারলেও মন্দ খেলেনি। অন্তত গোল হজম করার আগপর্যন্ত মাঠের লড়াই কিংবা বল দখলের লড়াইয়ে জামাল ভূইয়ারাই এগিয়ে ছিলেন। এই দাপটের কারণে গোলের সুযোগও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে না পারার খেসারত দিতে হয়েছে ম্যাচ হেরে।

বিপরীতে ফিলিস্তিন প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ম্যাচ নিজেদের করে নেয়। হার দিয়ে শুরু করলেও আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যে লক্ষ্য স্থির করেছে, সেখানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমনকি কঠিনও হয়নি। গ্রুপের অপর দল শ্রীলঙ্কাকে হারাতে হবে রোববারের ম্যাচে। শক্তির বিচারে আবার শ্রীলঙ্কার পেরে উঠার কথা নয় ফিলিস্তিনের বিপক্ষে।

জামাল ভূইয়ারা জাতীয় দলের ব্যানারে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ওমানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবলে। সেই দলের সেরা একাদশে কোচ জেমি ডে তিনটি পরিবর্তন আনেন এই ম্যাচে। রিয়াদুল ইসলাম, বিপলু আহমেদ, ও নাবীব নেওয়াজ জীবনের পরিবর্তে সুযোগ পান তপু বর্মণ, মামুনুল ইসলাম ও মতিন মিয়া।
বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল ফিলিস্তিনের বিপক্ষে প্রতিশোধ নেয়া। কারণ গত আসরে এই ফিলিস্তিনের কাছেই সেমিতে ২-০ গোলে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ ছিল জামাল ভূঁইয়াদের। গুছিয়ে খেলে সুযোগ তৈরি করতে থাকেন। কিন্তু গোল সোনার হরিণ হয়েই থাকে। ৮ মিনিটে প্রথম সুযোগ আসে লাল-সবুজের। ডি-বক্সের বাইরে সাদউদ্দিনকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ।

মামুনুলের নেয়া ফ্রি-কিক ফিলিস্তিনের রক্ষণের সেনানিরা বিপদমুক্ত করেন। আরেকবার সাদউদ্দিনের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। এরপর বলার মতো সে রকম সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও বলের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশেরই। কিন্তু তারপরও তাদের গোল হজম করতে হয় ধারার বিপরীতে।

২৮ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে দারিয়াসের ডিফেন্সচেরা পাস থেকে বাংলাদেশের তিনজন খেলোয়াড়েকে ফাঁকি দিয়ে ফাঁকায় বল পেয়ে যান খালেদ সালেম। সামনে তখন গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা একা। অবস্থা বেগতিক দেখে রানা পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে আসেন। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। তার বাম দিক দিয়ে প্লেসিং শটে নিশানা খোঁজে নেন খালেদ সালেম ১-০।

৩২ মিনিটে গোল পরিশোধের সহজ সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। রায়হানের লম্বা থ্রো থেকে গোল পোস্টের সামনে ফিলিস্তিনের একজন খেলোয়াড় হেড করলে সেই বল চলে যায় দ্বিতীয়বারে ফাঁকায় দাঁড়ানো তপু বর্মণের কাছে। তপু হেডও নিয়েছিলেন। কিন্তু তা বার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। এই অর্ধের একেবারে অন্তিম লগনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় গোল হজম করতে যাচ্ছিল। তবে তা হতে দেননি গোলরক্ষক রানা। মাহমুদ আবুরাদার শট ফিরিয়ে দেন রানা।

দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলে গোল পরিশোধের জন্য কোচ জেমি ডে মতিন মিয়ার পরিবর্তে রবিউলকে এবং মামুনুলের পরিবর্তে সুফিলকে মাঠে নামান। কিন্তু তাতে কোনো ফায়দা হয়নি। এদিকে প্রথম সুযোগেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে নেয় ফিলিস্তিন।

৫৭ মিনিটে রাদোয়ান আবুকারাসের ক্রস ইয়াসিন খান লাফিয়ে উঠে হেড করে বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলে সেই বল পেয়ে যান লেথ খারোব। দেখে শুনে হেড করে বলকে পাঠিয়ে দেন তার আপন ঠিকানায় ২-০। দ্বিতীয় গোল হজমের পর বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরার জন্য ৩৩ মিনিট পেয়েছিল। কিন্তু সে রকম কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি।

মানবকণ্ঠ/এআইএস