Image

‌'সোলার ইরিগেশনকে দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষিক্ষেত্রে বিরাট বিপ্লব ঘটানো সম্ভব'

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে : প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় কৃষকবান্ধব। তিনি চিন্তা করেন স্বল্প খরচে কৃষিপণ্য উৎপাদনে কীভাবে কৃষকদের সাহায্য করা যায়। সোলার ইরিগেশনকে দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে, একদিকে যেমন কৃষকের জন্য সাশ্রয় হবে, তেমনি বিরাট বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বিষয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারবে দেশ। নিজেদের স্বাবলম্বী করতে আমরা সারাদেশে এটি ছড়িয়ে দিতে চাই। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে সরকার সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে যা রংপুর বিভাগের মধ্যদিয়ে শুরু হলো। 
তিনি মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নীলফামারীর জেলার সৈয়দপুর শহরের ইকু হেরিটেজ এন্ড রিসোর্টে দেশব্যাপী সোলার 
ইরিগেশন দ্রুত বাস্তবায়ন বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের আয়োজনে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মুহাম্মদ ইসমাঈল হোসেনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য বলেন নেসকো পিএলসির চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তি, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান, নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ, দিনাজপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেবাশীষ চৌধুরী, নীলফামারী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, নীলফামারীর ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার 
আমিরুল ইসলাম প্রমূখ। 
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড.তৌফিক- ই- ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আর তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নতুন নতুন উদ্ভাবন যেমন প্রয়োজন তেমনি উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। এরই একটি অংশ সোলার প্যানেলে ইরিগেশন। তিনি বলেন, এক ইঞ্চি জমিও যাতে পতিত না থাকে সেজন্য সোলার প্যানেলের নিচেও কৃষি আবাদ করে চাহিদা মেটানো সম্ভব। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার  উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিদ্যুৎ ও সেচ বিভাগের কর্মকর্তা, গণমাধ্যম কর্মী ছাড়াও সোলার 
প্যানেল উপকারভোগীরা এতে অংশ নেন। 
এর আগে দুপুরে তিনি দিনাজপুর জেলার খানসামায় স্থাপিত সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প পরিদর্শন ও উপকারভোগীদের খোঁজ-খবর নেন। উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নের চৌরঙ্গী বাজার এলাকায় পরিদর্শন শেষে উপজেলা প্রশাসন ও দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ আয়োজিত সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ড. তৌফিক -ই-ইলাহী চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয় করতে সৌর বিদ্যুৎ খাত 
গুরুত্বপূর্ণ কেননা যুদ্ধ-বিগ্রহ কিংবা কোনো সংকটে এই খাতে প্রভাব পড়ে না। প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ অনেক বেশি সময়োপযোগী ও কার্যকর। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের প্রায় ১২-১৩ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত 
খরচ হয়েছে। এজন্য জ্বালানি সাশ্রয়ে সৌর বিদ্যুৎ খাতে গুরুত্ব দিতে সৌর বিদ্যুৎ চালিত 
সেচ কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য বলেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য দেবাশীষ চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও 
নেসকোর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী, নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবাশীষ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিন্নাহ আল মামুন, দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জিএম সাইফুল ইসলামসহ প্রমুখ।
উল্লেখ্য ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ৩২০ ওয়াটের ৪৫টি সোলার প্যানেল দিয়ে প্রায় ২৮ লাখ টাকা দিয়ে দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় সেচ পাম্প নির্মাণ করেন স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান। এর মধ্যে সরকার ১৮ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়। এই সেচ পাম্প দিয়ে প্রায় ২৫ একর আবাদি জমিতে সেচ দেওয়া হয় এবং অবশিষ্ট উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত 
হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ জাতীয় 
গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।