Image

ভারতের কাছে বাংলাদেশের বড় হার

স্পোর্টস ডেস্ক: ভারতের সাথে আর ইতিহাস গড়া হয়নি বাংলাদেশের। হেরে গেছে বেশ বড় ব্যবধানেই। পুনেতে বাংলাদেশের হার ৭ উইকেটে। এই হারে কঠিন হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল সমীকরণ। চার ম্যাচে মোটে এক জয়, পরের পাঁচ ম্যাচে জিততে হবে পাঁচটাই। ক্রিকেটের ভাষায় যা ডু অর ডাই।

আধুনিক ক্রিকেটে ২৫৬ অনায়াসেই পেরিয়ে যাবার লক্ষ্য, পুনের মাঠে যা নিতান্তই নগন্য। যা পেরোতে খুব একটা সময় নেয়নি ভারত। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই লক্ষ্য ৪১.৩ ওভারেই পেরিয়ে যায় ভারত। শতক হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন বিরাট কোহলি৷

এদিন আক্রমণাত্মক মনোভাব ধরে রেখে রান তাড়া শুরু করে ভারত। উদ্বোধনী জুটিতেই যোগ হয় ৮৮ রান। ১২.২ ওভারে এসে ভাঙে এই জুটি। বিধ্বংসী হয়ে উঠা ভারতীয় অধিনায়ককে ফিরিয়ে প্রথম আঘাত করেন হাসান মাহমুদ। অর্ধশতক স্পর্শ করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে রোহিত ফিরেছেন ৪০ বলে ৪৮ রানে।


রোহিত আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও শুভমান গিল ফেরেননি। ডেঙ্গু জ্বরে আসরের প্রথম দুই ম্যাচ খেলতে পারেননি এই ব্যাটার। পাকিস্তানের সাথে ফিরলেও আশানুরূপ ভালো করতে পারেননি। তবে বাংলাদেশকে পেয়ে ঠিকই জ্বলে উঠেন, তুলে নেন ফিফটি।

তবে এরপর আর ইনিংস বড় করতে পারেননি, ৫৫ বলে ৫১ করে ফেরেন মিরাজের শিকার হয়ে। গিলকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় উপলক্ষ এনে দেন মিরাজ। তৃতীয় উপলক্ষটাও আসে তার হাত ধরে। শ্রেয়াস আইয়ারকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে ফেরান ২৫ বলে ১৯ রানে। ৩০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৮৪ রান।

তিনে নেমে বিধ্বংসী শুরু করেন বিরাট কোহলি। পরের গল্পটা কেবল তারই। ছক্কা মেরে পূরন করেন ক্যারিয়ারের ৭৮তম শতক; ওয়ানডে ৪৯তম। সেই ছক্কায় নিশ্চিত করেন দলের জয়ও৷ বলা যায় তার শতকের অপেক্ষাতেই ছিল ভারত দল৷ অন্যথায় আরো আগেই ব্লু জার্সিধারীরা পৌঁছে যেত জয়ের বন্দরে।

৪১.৩ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় ভারত। বিরাট কোহলি ৯৭ বলে ১০৩ ও লোকেশ রাহুল অপরাজিত থাকেন ৩৪ বলে ৩৪ রানে। এই নিয়ে ৪ ম্যাচের চারটাতেই জয় পেল ভারত। ৮ পয়েন্ট নিয়ে তারাই আছে সেমিফাইনালের দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে।

এদিকে আজ আরো একবার ব্যর্থ বোলাররা। কোহলিদের কোনো প্রকার চাপেই ফেলতে পারেননি তারা। অথচ বোলিংই ছিল টাইগারদের শক্তির জায়গা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাসকিন-মোস্তাফিজদের পাত্তাই দেয়নি কেউ, আজ ভারতও করলো ছেলেখেলা। সেরা বোলার মিরাজ ৪৭ রানে নেন ২ উইকেট।


অবশ্য দিনের শুর‍ুটা দেখে মনে হচ্ছিলো, হয়তো বাংলাদেশ খুঁজে পেয়েছে ছন্দ। তবে উদ্বোধনী জুটি ভাঙতেই সেই আশায় গুড়েবালি, একটা সময় দুই শ’তে পৌঁছা নিয়ে দেখা দেয় টানাটানি। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে মান বাঁচায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করতে পেরেছে টাইগাররা।

বিশ্বকাপের আগে থেকেই বাংলাদেশের বড় মাথা ব্যথার কারণ ছিল ওপেনিং। প্রথম তিন ম্যাচের ব্যর্থতায় যা হয়ে উঠেছিল আরো প্রকট। তবে ভারতের বিপক্ষে আজ সেই ওপেনাররাই এনে দেয় স্বস্তি। বুমরাহ-সিরাজদের চোখে চোখ রেখে ১৪.৩ ওভারে ৯৩ রান তুলে নেয় বাংলাদেশ। এরপরই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি।

দুই ওপেনার খেলছেন দেখেশুনেই। শুরুটা ধীর গতির হলেও সময় নিয়ে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছেন লিটন দাস ও তানজিদ তামিম। নিজেকে প্রমাণ করতে সেরা মঞ্চটাই বেছে নেন তামিম। দারুণ ব্যাট করে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। তবে এরপর ফিরেছেন দ্রুতই। কুলদীপ যাদবের শিকার হন ৪৩ বলে ৫১ রানে।

এদিন সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব পেলেন বটে, তবে অধিনায়কের মতো সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেনিন নাজমুল হোসেন শান্ত। ফেরেন ১৭ বলে মাত্র ৮ রান করে। তামিম-লিটনের এনে দেয়া ছন্দ ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। চারে সুযোগ পেয়ে আজও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি মেহেদী মিরাজ। ১১ বলে ৩ রান করেন এই ব্যাটার।


এদিকে একপ্রান্তে উইকেট পড়লেও লিটনকে নিয়ে ভয়ে ছিল ভারত। কারণটা অজানা নয়। এই ব্যাটার কী করতে পারেন, তা ভালো করেই জানা রোহিত শর্মাদের। জ্বলেও উঠেছিলেন লিটন, তবে ইনিংসটা অসাধারণ করে তোলার আগেই তাকে থামান রাবিন্দ্র জাদেযা। আউট হন ৮২ বলে ৬৬ রানে। বিনা উইকেটে ৯৩ থেকে ২৭.৪ ওভারে ১৩৭ রানের মাথায় ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে এসে তাওহীদ হৃদয় যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। খুঁজলেন আবারো। যার ফল ভুগতে হচ্ছে দলকেও। যেখানে প্রয়োজন ইনিংসের গতি বাড়ানো, সেখানে দলকে ঠেলেছেন আরো পেছনে। ৩৫ বলে করেন মোটে ১৬ রান। বড় হয়নি ভায়রা-ভাইয়ের জুটিও। দারুণ খেলতে থাকা মুশফিক ফিরেছেন জাদেযার দারুণ ক্যাচে ৪৬ বলে ৩৮ রান করে।

এরপর থেকে একাই দলকে টানেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের হাত ধরেই ২০০ পেরোয় দলের সংগ্রহ। পৌঁছে দেন আড়াই শ’র খুব কাছেও। ৪৯.২ ওভারে বুমরাহর শিকার হবার আগে ৩৬ বলে ৪৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। নাসুম আহমেদের ব্যাটে আসে ১৪ রান। শেষ বলে ছক্কা হাঁকান শরিফুল ইসলাম।

এদিন নিয়মিত অধিনায়ককে সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই ভারত বধ মিশনে নামে বাংলাদেশ। চোটের কারণে দলে নেই এই অলরাউন্ডার। সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দেন নেতৃত্ব। নেই নিয়মিত মুখ তাসকিন আহমেদও। তাদের বদলে একাদশে আসেন হাসান মাহমুদ ও নাসুম আহমেদ।