Image

ইরাকে মার্কিন ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিল ইরান

ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ‘আইন আল-আসাদের’ ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আইআরজিসি গতকাল বুধবার ভোররাতে এক বিবৃতিতে বলেছে, লে. জেনারেল কাসেম সোলাইমানির ওপর আগ্রাসী মার্কিন সেনাদের ‘সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক’ হামলার কঠোর জবাব দিতে আইন আল-আসাদ ঘাঁটিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে তারা আমেরিকার ‘মুখে চপেটাঘাত’ করেছেন। আইআরজিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার কাপুরুষোচিত পদক্ষেপের ‘কঠোর প্রতিশোধ’ নেয়ার প্রতিশ্রূতি বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বুধবার ভোররাতে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন বিমান ঘাঁটি ‘আইন আল-আসাদ’র ওপর ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করে ঘাঁটিটিতে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অভিযানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘শহীদ সোলাইমানি’ এবং এই অভিযানের মাধ্যমে যে ‘মহান বিজয়’ অর্জিত হয়েছে সেজন্য বিবৃতিতে ইরানের মুসলিম জাতিকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে।

ইরাকের স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার ভোররাত ১টা ৩০ মিনিটে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। গত শুক্রবার ভোররাতের ঠিক এই সময় জেনারেল সোলাইমানির ওপর হামলা চালিয়েছিল মার্কিন সন্ত্রাসী সেনারা। মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন বলেছে, তাদের ঘাঁটিতে এক ডজনেরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এ ছাড়া, ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় ইরবিল শহরের মার্কিন ঘাঁটিতেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে। ইরাকের আল-মায়াদিন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের সংবাদদাতাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইরবিল বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। হামলার পর ওই বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আইআরজিসির বিবৃতিতে ‘বড় শয়তান’, ‘রক্তপিপাসু’ ও ‘দাম্ভিক’ আমেরিকাকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলা হয়েছে, যদি আবার কোনো ‘শয়তানি’ করা হয় কিংবা কোনো আগ্রাসন বা উসকানি চালানোর চেষ্টা করা হয় তাহলে ওয়াশিংটনকে এর চেয়ে ‘বেদনাদায়ক’ ও ‘বিপর্যয়কর’ জবাব দেয়া হবে। একইসঙ্গে বিবৃতিতে আমেরিকার যেসব মিত্র দেশ তাদের ঘাঁটিগুলোকে এই সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের প্রতিও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যে দেশের ভ‚মি থেকেই ইরানের ওপর হামলা চালানো হবে সেই দেশের ওপরও আক্রমণ চালানো হবে। ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার অপরাধে ইহুদিবাদী ইসরাইলকেও ইরান-আমেরিকার মতো সমান অপরাধী বলে গণ্য করে। বিবৃতিতে এর চেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আমেরিকার জনগণের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা একটি চপেটাঘাত মাত্র: জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর এক সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি বলেছেন,  ভোরে যে প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে তা একটি চপেটাঘাত মাত্র। তিনি আরো বলেন, গত রাতে একটি চপেটাঘাত করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গোটা অঞ্চলে মার্কিন সেনা উপস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। তারা এই অঞ্চলে যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইরাক সরকার মার্কিন সেনাদের বহিষ্কারের বিষয়ে সংসদে যে বিল পাস করেছে সেটারও প্রশংসা করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তিনি বলেন, ইরানের সংসদও মার্কিন বাহিনীকে সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ভালো কাজ করেছে।  

যুদ্ধের ভার বহনের ক্ষমতা নেই আমেরিকার- ন্যান্সি পেলোসি : ইরাকের ভূখণ্ডে দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর পর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘আমরা বিষয়টি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ইরাকে আমাদের সেনা মোতায়েন রয়েছে; আমরা অবশ্যই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব এবং অপ্রয়োজনীয় উসকানির অবসান ঘটাব। তিনি বলেন, এই প্রচেষ্টা চালানো হবে মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ন্যান্সি পেলোসি ইরানকেও সংঘাত বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

মানবকণ্ঠ/টিএইচডি