Image

কালিগঞ্জে বিজিবি সদস্যের নেতৃত্বে ফিল্মি স্টাইলে জমি দখল হুমকি ও মারপিট, দুই নারী আহত

বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে কাজী আহছান (৩৫) নামে এক বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়া বাহিনী নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে এক অসহায় নারীর দীর্ঘদিনের ভোগদখলের পুকুর ও আনছার ভিডিপি ক্লাবের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। পুকুর ও জমি দখলের সময় বিজিবি সদস্য কাজী আহছানের নির্দেশে বেধড়ক মারপিটে আহত দুই নারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার (১২ অক্টোবর) উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামে। ক্ষমতা ও অর্থের দাপট দেখানোর পাশাপাশি এলাকাবাসীকে প্রকাশ্যে খুন জখমের হুমকি দেয়ায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

সরেজমিন গেলে মথুরেশপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের একাধিকবার নির্বাচিত মেম্বার কলিম গাজী (৫৮), ৬নং ওয়ার্ডের বারবার নির্বাচিত সাবেক মেম্বার, আনছার ভিডিপি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ রিয়াজুল ইসলাম (৫৪), ক্লাবের সার্টিফিকেটধারী সদস্য শেখ আনিসুর রহমান (৫৭) ও কয়েকজন জানান, মুকুন্দপুর গড়ের হাটখোলা এলাকায় ১৯৯৪ সালে মুকুন্দপুর গ্রামের রিয়াজুল হক ও তার ওয়ারেশদের দানকৃত ৭ শতক সম্পত্তিতে আনছার ভিডিপি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্লাবে সদস্য সংখ্যা ১২৪ জন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখানে জাতীয় দিবসসমূহ পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। আনছার ভিডিপি ক্লাবের পাশে অবস্থিত একটি পুকুর প্রায় ৩৫ বছর যাবত ভোগদখল করছেন প্রবাসী রবিউল ইসলামের স্ত্রী আকলিমা বেগম (৫৬)। আকলিমা বেগমের দীর্ঘদিনের ভোগদখলকৃত ৮শতক পুকুর ও আনছার ভিডিপি ক্লাবের ঘেরাবেড়া দেয়া ৭শতক জমির মধ্য থেকে দুই শতক জামি বন্দোবস্ত নিয়েছেন জানিয়ে বিজিবি সদস্য কাজী আহছান এর পিতা কাজী রফিকুল ইসলাম (৬০) গত ৫ অক্টোবর ওই জায়গা জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালালে স্থানীয়দের বাধায় ব্যর্থ হন। তবে আনছার ভিডিপি ক্লাবের জায়গা থেকে একটি নিমগাছ ও একটি কদমফুল গাছ কেটে নিয়ে যায় তারা। সম্প্রতি কালিগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত কুমার বিশ্বাস অন্যত্র বদলী হয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পূর্বে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে কাজী রফিকুল ইসলামকে আনছার ভিডিপি ক্লাব ও আকলিমা বেগমের ৩৫ বছরের অধিক সময়ের ভোগদখলকৃত জমি গোপনে বন্দোবস্ত দিয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওই বন্দোবস্ত বাতিলপূর্বক ক্লাব ও আকলিমা বেগমের নামে বন্দোবস্ত দেয়ার আবেদন করা হয়েছে।


এ ঘটনা জানতে পেরে ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) যশোর এলাকায় কর্মরত কাজী আহছান বাড়ি এসে গত ১২ অক্টোবর সকালে অর্ধশতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে আকলিমা বেগমের পুকুর দখল করতে থাকে। এ সময় আকলিমা বেগম ও তার মেয়ে রোজিনা পারভীন (২৮) সেখানে গেলে বিজিবি সদস্য আহছানের নির্দেশে তার স্ত্রী রেহানা পারভীন (২৭) ও ভাড়াটিয়া বাহিনী তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বেধড়ক মারপিট করে। তাদের রক্ষা করার জন্য আনছার ভিডিপি ক্লাবের সদস্য রহিমা বেগম (৪৮) এগিয়ে গেলে তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া হয়। স্থানীয়রা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে বিজিবি সদস্য কাজী আহছান কেউ এগিয়ে গেলে তাদের খুন জখম করবে বলে চিৎকার করে হুমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে হামলায় আহত আকলিমা বেগম ও তার মেয়ে রোজিনা পারভীনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্থানীয়রা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আকলিমা বেগম (৫৮) জানান, বিজিবি সদস্য আহছান অনেক লোকজন নিয়ে আমার ৩৫ বছরের বেশী সময়ে ভোগদখলে থাকা পুকুর দখল করতে থাকে। আমি ও আমার মেয়ে রোজিনা পারভীন সেখানে গেলে তারা দা, শাবল, লাঠি নিয়ে আমাদের ধাওয়া করে। আমরা ভয় পেয়ে কিছুদূর চলে আসার পর আহছানের নির্দেশে তার স্ত্রী ও আরও কয়েকজন আমাদের দু’জনকে মাটিতে ফেলে প্রচুর মারপিট করেছে। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামী বাড়িতে থাকে না। তিনটা মেয়ে সন্তান, তাদেরও বিয়ে হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে কাজী রফিকুল ইসলাম গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে আমার পুকুরের মাছ মেরে ফেলেছিল। এখন বন্দোবস্ত নিয়েছে জানিয়ে আমাকে ও আমার মেয়ে রোজিনাকে মারধর করে পুকুরটি দখল করে নিয়েছে। দীর্ঘদিনের ভোগদখলকৃত পুকুর বন্দোবস্ত চেয়ে অনেকদিন আগে আমি আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এসিল্যান্ড আমাকে বন্দোবস্ত না দিয়ে গোপনে আরেকজনকে দিয়েছে। তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং তাদের উপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

 

অপরদিকে আনছার ভিডিপি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শেখ রিয়াজুল ইসলাম জানান, দানকৃত সম্পত্তিতে আনছার ভিডিপি ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখন যদি বন্দোবস্ত নেয়ার প্রয়োজন হয় আমরা বন্দোবস্ত নিবো। এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি সদস্য কাজী আহছান বলেন, সরকারের নিকট থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে ঘেরাবেড়া দেয়া হচ্ছিল। এ সময় কিছুটা ঝামেলা হলেও আমি তার সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। মারপিট ও হুমকি ধামকি প্রদানের ঘটনা অস্বীকার করেন তিনি।

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুজা মন্ডল বলেন, আমি দুই একদিনের মধ্যে ঘটনাস্থলে যাবো। বিস্তারিত জেনে তারপর আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।