Image

সৈয়দপুরে সতীর্থের নাটক 'অথঃ স্বর্গ বিচিত্রা' মঞ্চস্থ

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে সতীর্থ সাহিত্য সংসদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হয়েছে নাটক অথঃ স্বর্গ বিচিত্রা।

 

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ৯ টায় শহরের রেলওয়ে মর্তুজা মিলনায়তনে মঞ্চ নাটকের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নাটকটি মঞ্চস্থ করে আয়োজক সংগঠনটি। রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক এই নাটকটি উপভোগ করেন অসংখ্য নাট্যপ্রেমী দর্শক। এটি ছিল সংগঠনের পঞ্চম প্রযোজনা। 

 

নাটকের শুরুতেই অস্থিরতা, এরপর সংলাপ শুরু হতেই চমকে যেতে হয়। রীতিমতো স্যুট টাই পরা চরিত্রে হিন্দুদের বিভিন্ন দেবদেবতা। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, কামদেব, নারদের কথোপকথনে শুরু হয় নাটক। স্বর্গলোকে বসে মর্ত্যবাসীদের নানা কর্ম অপকর্ম নিয়ে অস্থির হয়ে আছেন ব্রহ্মা।

 

এমনকি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যমরাজকেও ছাড় দেয়নি মর্ত্যবাসী। জ্বালিয়ে দিয়েছে তার অফিস। আহত যমরাজ বিচার দিতে আসে ব্রহ্মার কাছে। কিন্তু সমাধান আসে না। উল্টো মর্ত্যবাসী স্বয়ং ব্রহ্মাকেই শাসাতে আসে। পেশ করা হয় বিভিন্ন দাবী দাওয়া। পরে অবশ্য ব্রহ্মার চাতুর্যের কাছে হার মানে মর্ত্যবাসী খ্যাদা কোদালী। বিষ্ণুর সম্মান রাখতে ব্রহ্মার হাত পা ভাঙার অভিনয় ধরা পড়ে যায় আরেক দেবতা শনির কাছে। এই নিয়ে ব্রহ্মার সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে বিষ্ণু। সেই সুযোগে বিষ্ণুসহ কামদেব ও চন্দ্রদেবকেও নিজের দলে টেনে নেয় শনি দেবতা। নতুন দেবতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় শনি। একে একে সবাই ছেড়ে যায় ব্রহ্মাকে। এমনকি একনিষ্ঠ চ্যালা নারদ মুনিও শনির দলে ভেড়ে। তারপরও ক্ষমতার চেয়ার আঁকড়ে রাখতে মরিয়া হয় ব্রহ্মা। এভাবেই মঞ্চায়ন হতে থাকে নাটকের একেকটি দৃশ্য।

 

রাজনৈতিক ব্যঙ্গ নিয়ে লেখা নাটকটিতে মূল বক্তব্য ছিল, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। ন্যায়ের পথে না থাকলে নিজের কাছের মানুষেরাও একসময় চলে যায়। রাধারমণ ঘোষের লেখায় নাটকটির নির্দেশনা দেন সৈয়দপুর সতীর্থ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য আমিরুল বাপ্পি।

 

নাটকে ব্রম্মা চরিত্রে সতীর্থের জ্যেষ্ঠ সদস্য গোলাম রুবায়েদ মিন্টু, বিষ্ণুদেব কামরুজ্জামান শাওন, কামদেব সারোয়ার রহমান, শনিদেব সায়মা পারভীন রুহি, নারদ তানভির, চন্দ্রদেব শরিফুল ইসলাম সাজু, যমরাজ চরিত্রে মিজানুর রহমান মিজান ও  খ্যাদা কোদালী চরিত্রে মো. লাবিব অভিনয় করেন।

 

নাটকের চরিত্রাভিনেতারা জানান দীর্ঘদিন পর নাটক মঞ্চস্থ করতে পেরে আনন্দিত তারা। দীর্ঘদিন পর মর্তুজা মিলনায়তনে মঞ্চ নাটক হচ্ছে জেনে নাটকটি উপভোগ করতে আসেন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সৈয়দপুর কমিটির সাধারণ সম্পাদক কুমার অপু বিশ্বাস। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, প্রায় দেড়শ বছর পুরোনো এই মিলনায়তনে দর্শকরা খুঁজে পেয়েছে মঞ্চ নাটকের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। ডিজিটাল প্লাটফর্মের যুগে এই ধরণের আয়োজন আরো বেশি হওয়া প্রয়োজন। 

 

নাটকটির নির্দেশক আমিরুল বাপ্পি বলেন, নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নয়। নিখাদ বিনোদনের জন্যই এই নাটক। তবে, নাটকের মধ্যে প্রতিটি সংলাপে যে বার্তা রয়েছে তা নিজেরা ধারণ করতে পারলে সমাজে অনেক পরিবর্তন সম্ভব।

 

আয়োজক সতীর্থ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ ইকবাল হোসেন জানান, সমাজ পরিবর্তনে কিছুটা ভুমিকা রাখতে চায় এই সংগঠনটি। এই ধরণের প্রযোজনা ভবিষ্যতে আরো হবে বলেও জানান তিনি।