Image

মোমিনের জীবন কল্যাণে ভরপুর

মানুষের জন্মের সঙ্গে মৃত্যুর সম্পর্ক নিবিড়। মৃত্যু মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত ফয়সালা। আল্লাহ বলেন, ‘সকল জীবকেই মৃত্যুর স্বাদগ্রহণ করতে হবে এবং কিয়ামতের দিবসে অবশ্যই তোমাদের প্রতিফল দেওয়া হবে; অতএব যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে জান্নাতে দেওয়া হবে, সে-ই সফলকাম; আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫)। হায়াতের জীবনে ‘হতাশা’ ও ‘আশাহীনতা’ শব্দগুলো আল্লাহর খাঁটি মোমিন বান্দার শব্দভাণ্ডারেই নেই। মোমিন বান্দার যাপিত জীবন নিয়ে এটিই মহামানব রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর্যবেক্ষণের সারকথা।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘মোমিনের অবস্থা দেখে আমি বিস্মিত হই! প্রত্যেকটি বিষয়ই তার জন্য কল্যাণকর। আর মোমিন ছাড়া এই বৈশিষ্ট্য আর কেউ-ই লাভ করতে পারে না। মোমিন সুখ-শান্তিতে (আল্লাহর) শোকর আদায় করে, যা তার জন্য কল্যাণকর। তেমনি বিপদাপদে মোমিন ধৈর্যধারণ করে, যা তার জন্য কল্যাণকর। (সহিহ মুসলিম: ২৯৯৯)। বর্ণিত হাদিসে সুখ-শান্তি ও বিপদাপদ উভয় অবস্থাই মোমিনের জন্য কল্যাণের এভাবে যে, সুখ-শান্তি পেলে মোমিন আল্লাহর শোকর আদায় করে, আর শোকর আদায় করা নেকির কাজ এবং আরও বেশি নেয়ামত লাভের কারণ। আবার জীবনে কখনো দুঃখ-দুর্দশায় জর্জিত হলে মোমিন ধৈর্যধারণ করে, যার ফলে আল্লাহর কাছে মোমিনের মর্যাদা বৃদ্ধি হতে থাকে। কোরানের বর্ণনানুযায়ী, আল্লাহ স্বয়ং ধৈর্যধারণকারীর সংশ্রব অবলম্বন করেন! (সুরা বাকারা : ১৫৩)। সুবহানাল্লাহ!

মোমিনের মৃত্যুও কল্যাণকর : আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর পথে নিহতদের মৃত বোলো না; তারা তো বরং জীবিত, তবে তোমরা তা অনুধাবন করতে পারো না।’ (সুরা বাকারা : ১৫৪)। আবার আপনজনের মৃত্যু মোমিনের জন্য সাময়িক মনোকষ্টের কারণ হলেও মৃত্যু মূলত মোমিনের জন্য রহমতস্বরূপ। কেননা মৃত্যু না হলে একজন মোমিন কখনো জান্নাত লাভ করতে পারে না। সুস্থ-স্বাভাবিক মৃত্যুই মোমিনের জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র বাধা। হাদিসে পাকে এসেছে, নবী (সা.) বলেন, ‘প্রতি ফরজ নামাজের শেষে যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যু ছাড়া তার জান্নাতে যাওয়ার আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (বুলুগুল মারাম : ৩০৬)।

একটি বিভ্রান্তি ও নিরসন : পৃথিবীতে খোদাদ্রোহী ও অমুসলিমদের সম্পদের প্রাচুর্য ও বৈষয়িক উন্নতি দেখে মোমিনের বিভ্রান্ত হওয়া একেবারেই উচিত নয়। অমুসলিমদের বৈষয়িক উন্নতি এখনকার যুগে নতুন কিছু নয়। এটি বহু আগে থেকেই ঘটে আসছে। বিষয়টি আরেকভাবে বললে, সামান্য সময়ের পৃথিবীতে অমুসলিমদের জাগতিক উন্নতি আল্লাহ তাআলারই সিদ্ধান্ত। আল্লাহ বলেন, ‘যারা শুধু দুনিয়াবি জীবন এবং তার জাঁকজমকতা কামনা করে, আমি তাদের কৃতকর্মের ফল দুনিয়াতেই মিটিয়ে দিই এবং এতে তাদের কোনো কমতি করা হয় না।’ (সুরা হুদ : ১৫)।

উল্লেখ্য, দুনিয়াবি সুখ-শান্তি এবং উন্নতি আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়ার লক্ষণ তো নয়-ই; বরং অমুসলিমদের জন্য আখেরাতে কোনো প্রতিদান নেই বলে দুনিয়াতেই আল্লাহ তাদের জীবনকে আরাম-আয়েশ আর বিত্ত-বৈভবে ভরপুর করে দেন। কিন্তু মোমিনের ব্যাপারটি এমন নয়। দুনিয়াতে সামান্য কিছু দিন কষ্টের বদলা হিসেবে আখেরাতে মোমিনের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি আর ভোগবিলাসের বন্দোবস্ত। আরেকটি বিষয় বিশেষ প্রণিধানযোগ্য যে, এই পৃথিবীর বুকে আল্লাহর কাছে মুহাম্মদ (সা.)-এর চেয়ে প্রিয় না কেউ এসেছে, আর না কিয়ামত অবধি কেউ আসবে। অথচ সেই মুহাম্মদ (সা.) তার জীবদ্দশার অনেক ক্ষেত্রে অনাহারে কাটিয়েছেন। ক্ষুধায় কাতর হয়েছেন। খন্দকের যুদ্ধকালীন ক্ষুধায় তিনি পেটে পাথরও বেঁধেছেন। নবী (সা.) বলেন, ‘আমার রব আমার নিকট মক্কার কংকরময় বিস্তীর্ণ প্রান্তর স্বর্ণে পরিণত করে দেয়ার প্রস্তাব রেখেছিলেন। কিন্তু আমি বলেছি, হে আমার রব! আমার তার প্রয়োজন নেই। বরং আমি এক দিন তৃপ্তির সঙ্গে খাব আর এক দিন ক্ষুধার্ত কাটাব।’ (জামে তিরমিজি : ২৩৪৭)।

লেখক : মুফতি আবদুল্লাহ আল হাদী।