Image

বিশ্ব ইজতেমা শুরু, তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে শরিক হতে টঙ্গীর তুরাগ তীরে ঢল নেমেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের। কারও মাথায়, কারও কাঁধে একাধিক ব্যাগ। স্থানীয় মুসল্লিদের হাতে জায়নামাজ। কনকনে শীত উপেক্ষা করে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সকাল থেকেই ছুটছেন তাবলিগের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার উদ্দেশে।

কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এই পর্বে অংশ নিয়েছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। সওয়াব হাসিলের আশায় তাবলীগ জামাতের বড় এই আয়োজনে বিদেশের মুসল্লিরাও অংশ নিচ্ছেন।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক, মিনি ট্রাক, প্রাইভেটকার, বাস ও সিএনজিতে করে তুরাগ তীরে নামছেন মুসল্লিরা। শীতের পোশাক, তাবু ও অতিরিক্ত খাবার নিয়ে আসছেন তারা। সড়কে শুধু মানুষ আর মানুষ। তুরাগ তীরে যাওয়ার সড়কে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যান চলাচল।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জুমার নামাজের পর দুই সড়কেই ফের চালু হবে যান চলাচল। মুসল্লিদের ঢল সামলাতে থানা পুলিশের সঙ্গে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরাও।

র‍্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যানজট এড়াতে এরই মধ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

র‌্যাবের মুখপ্রাত্র লে. কর্নেল সরওয়ার-বিন-কাশেম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় বাড়তি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠের ভেতর ও বাইরে বিভক্ত হয়ে কাজ করবে। র‌্যাবের দুটি হেলিকপ্টার ইজতেমা মাঠের আকাশে টহল দেবে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। নজরদারির জন্য মাঠের চারদিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

ইজতেমাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাত স্তরে কাজ করছেন পুলিশের প্রায় ৮ হাজার সদস্য। পুরো ইজতেমার মাঠ ঘিরে সক্রিয় র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। পুলিশের নিজস্ব ১৬টি ওয়াচ টাওয়ারসহ র্যাবের নিজস্ব ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো ইজতেমা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব ইজতেমা চলাকালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মুসল্লিদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মুসল্লিদের জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ মেডিকেল টিম। মাঠের আশপাশের খাবার দোকান ও আবাসিক হোটেলের মান ঠিক রাখতে ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন। সেনাবাহিনীর সহায়তায় তুরাগ নদীতে তৈরি করা হয়েছে ছয়টি ভাসমান সেতু।

এছাড়াও ইজতেমা মাঠের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশের হোন্ডা টিমসহ সাদা পোশাকের পুলিশও কাজ করছে। তুরাগ নদেরও কয়েক জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের সদস্যরা। এবার পুরো ইজতেমাকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলার লোকজনকে খিত্তা অনুসারে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান : আগত মুসল্লিরা যে সব খিত্তায় অবস্থান করছেন, তা হলো—গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২, ৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫ থেকে ১৯ ও ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩২), রাজশাহী (খিত্তা-২০), নওগাঁ (খিত্তা-২১), নাটোর (খিত্তা-২২), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা-২৩), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৬), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩০), নড়াইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩৩), নীলফামারী (খিত্তা-৩৪), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৩৫), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৬), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৭), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৩৮), মাগুরা (খিত্তা-৩৯), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৪০), বগুড়া (খিত্তা-৪১), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-৪২), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৩), যশোর (খিত্তা-৪৪), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৫), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৬), নরসিংদী (খিত্তা-৪৭), ভোলা (খিত্তা-৪৮), জামালপুর (খিত্তা-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৫০, ৫১), মেহেরপুর (খিত্তা-৫২), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৫৩), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৪), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৫), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৬), বরিশাল (খিত্তা-৫৭), রাজবাড়ি (খিত্তা-৫৮), শেরপুর (খিত্তা-৫৯), শরীয়তপুর (খিত্তা-৬০), মাদারীপুর (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৩), রাঙমাটি (খিত্তা-৬৪), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৬৫), বান্দরবান (খিত্তা-৬৬), ফেনী (খিত্তা-৬৭), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৮), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৯), চাঁদপুর (খিত্তা-৭০), বি. বাড়িয়া (খিত্তা-৭১), খুলনা (খিত্তা-৭২), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৩), বরগুনা (খিত্তা-৭৪), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৬), পিরোজপুর (খিত্তা-৭৭), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৭৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৮০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৮১), পাবনা (খিত্তা-৮২), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা-৮৪), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৫), জয়পুরহাট (খিত্তা-৮৬), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৮৭)।

তাছাড়া রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের খিত্তাগুলোর অবস্থান তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে। অন্যদিকে ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১ ও ১৫ (খ) নম্বর খিত্তাগুলো সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

স্থানীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল জানান, ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বিদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন। তিনি জানান, টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় আসা দেশি-বিদেশি মেহমানদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

মানবকণ্ঠ/জেএস