Image

সাতক্ষীরা-৪: নৌকা ও নোঙ্গরের জমজমাট লড়াইয়ের আভাস

আবুল কালাম বিন আকবার, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা): দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৫দিন। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসায় গণসংযোগ ও প্রচারণায়ও বেড়েছে গতি। জয়ের বন্দরে পৌছাতে নির্বাচনী জনসভা, পথসভা, গণসংযোগে প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকরা মাতিয়ে রাখছেন সর্বত্র।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন সাত প্রার্থী। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলন (নৌকা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) মনোনীত প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজা (নোঙ্গর), তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আসলাম আল মেহেদী (সোনালী আঁশ), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোঃ মাহবুবর রহমান (লাঙ্গল),বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মোঃ শফিকুল ইসলাম (ডাব), ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (এনপিপি) মনোনীত প্রার্থী শেখ আবু ইছহাক (আম) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মোঃ মিজানুর রহমান (কাঁচি)।


এর মধ্যে নৌকা ও নোঙ্গর রয়েছে মূল লড়াইয়ে-এমনটা আভাস পাওয়া গেছে ভোটের ময়দান থেকে। এই দুই প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভা ও পথসভায় জড়ো হচ্ছেন হাজার হাজার জনতা। এসব জনসভা ও পথসভা থেকে তারা নির্বাচিত হলে এলাকার জন্য কী কী করবেন সেব্যাপারে জানাচ্ছেন ভোটারদের। এর পাশাপাশি একে অপরের বিরুদ্ধে তুলছেন নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ। আচরণবিধি লংঘনের কারণে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলন এবং নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী এইচএম গোলাম রেজাকে শোকজ করেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র সহকারী জজ প্রবীর কুমার দাস।


তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অপর ৫ প্রার্থীর কিছু কিছু পোস্টার চোখে পড়লেও প্রচারণা, জনসভা কিংবা গণসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে না। মাঠে দেখা মিলছে না এসব প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদেরও। রাজনীতির মাঠে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় এসব দলের কর্মী-সমর্থকদের ভোট নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই বলে আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে জানা গেছে।


জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার ১২ ইউনিয়ন এবং কালিগঞ্জ উপজেলার (আংশিক) ৮ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসন। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ১৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ৪৩৪ এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৫ জন।

শ্যামনগর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫৮। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার  ৬৬৮ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৮৭। অপরদিকে, কালিগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৯ হাজার ৭৬৬ এবং মহিলা ভোটার ৭৮ হাজার ৬৮। শ্যামনগর উপজেলায় ৯১ টি এবং কালিগঞ্জ উপজেলায় ৫১ টি ভোটকেন্দ্রে নেয়া হবে ভোট। ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে কোন কেন্দ্রকে চিহিৃত করা হয়নি।


সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশে যাতে ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করতে পারে সে ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার দিপংকর দাশ দিপু।


এদিকে শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার প্রার্থী আতাউল হক দোলন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার পিতা সাতক্ষীরা-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদ বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার ছেলে আতাউল হক দোলন রাজনীতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। এলাকায় মিশুক ও সদালাপী হিসেবে পরিচিত আতাউল হক দোলন ছিলেন শ্যামনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে রয়েছে তার নিবিড় সম্পর্ক। দলীয় ভোটব্যাংক ও ক্লিন ইমেজের কারণে আতাউল হক দোলন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনেকটা সহজেই বিজয়ী হবেন বলে মনে করছেন তার কর্মী সমর্থকরা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এসএম আতাউল হক দোলন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমি নিরলসভাবে কাজ করতে চাই।  সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের মানুষের যে সমস্যা রয়েছে সেগুলো চিহিৃত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ নিবো। দলীয় ইশতেহার যথাযথভাবে বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে দলমত নির্বিশেষে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাকে বিজয়ী করার জন্য ভোটারদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন এসএম আতাউল হক দোলন।

অপরদিকে, এইচএম গোলাম রেজা ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম এইচএম এরশাদের কাছের মানুষ। জাতীয় পার্টি থেকে তিনি ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পানির প্লান্ট স্থাপন, শ্যামনগরে বাস টার্মিনাল স্থাপন, পুকুর খনন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উন্নয়মূলক কাজ করেন। বিগত ২০১৮ সালে এইচএম গোলাম রেজা বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এর প্রার্থী হিসেবে ‘কুলা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ওই নির্বাচনে পরাজিত হলেও জনগণের মাঝে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। সে কারণে তৃণমূলের মানুষের সাথে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। দল নিরপেক্ষ ভোটারদের একটি বড় অংশ এইচএম গোলাম রেজাকে সমর্থন করবেন এবং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হলে নোঙ্গর প্রতীকই জয়ের বন্দরে পৌছাবে আশাবাদ এ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের।


নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ ও জয়ের ব্যাপারে সম্ভাবনা কতটা জানতে চাইলে এইচএম গোলাম রেজা বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ভোট হলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, ছোটবেলায় বিনা চিকিৎসায় মা’কে হারিয়েছি। নির্বাচিত হলে আমি শ্যামনগরে একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল করবো। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে উপকূল অঞ্চলকে রক্ষা করবো। শহরের মতো কালিগঞ্জ ও শ্যামনর এলাকায় সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা করবো। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ১ হাজার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান করে দিবো। আমার এলাকায় চাঁদাবাজ, দখলবাজ, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদে ঠাঁই হবে না। তাছাড়া কেউ যাতে মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবো।

এদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটরদের মধ্যে ভোট নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। শঙ্কামুক্ত পরিবেশে এবার ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে। প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের পক্ষ থেকেও ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।