Image

পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা জনগনের ভালবাসায় সিদ্দিকুল আলম এখন এমপি

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে : ২০২১ সালে সৈয়দপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিয়েছিলেন সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক। ভোটের দিন তাঁকে ও তার 
পরিবারকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। সে সময় ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বাঁধা দেওয়া, ভোট কেন্দ্র দখল ও কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে সৈয়দপুর পৌর নির্বাচন 
থেকে সরে দাড়ান তিনি। সেই সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক গত ৭ জানুয়ারি শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগনের হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় বিপুল ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। সৈয়দপুর -কিশোরগঞ্জের উন্নয়ন হবে এমন প্রত্যাশায় জনগন তাঁকে সংসদে যাওয়ার স্থায়ী টিকিট দিয়েছে। নির্বাচনে জয়ী হতে তাঁকে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ সদস্য নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বাছাইয়ে স্বাক্ষর জটিলতায়ল তাঁর মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।  পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে শুনানী শেষে ফিরে পান তাঁর প্রার্থীতা। এরপর নির্বাচনের মাঠে লড়াই চলিয়ে যাওয়ার মধ্যেই সাংগঠনিক শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারপরও হাল ছাড়েননি তিনি। জননন্দিত ওই নেতা সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জের জনগনকে নিয়ে চালিয়ে গেছেন প্রচার প্রচারণা। তারপরেও থেমে থাকেনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কিন্তু সেইসব চক্রান্ত মোকাবেলার পাশাপাশি গেছেন জনগনের দ্বারে দ্বারে। তাঁর প্রচারণায় জয় করেছেন ভোটারদের ভালবাসা। জনগনও সেই ভালবাসা প্রকাশ করেছে তাঁর কাঁচি মার্কায় ভোট দিয়ে। এবারের ওই নির্বাচনে
হেভিওয়েট দুই প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিনকে পরাজিত করে নীলফামারী-৪ আসনে সংসদ সদস্য 
নির্বাচিত হয়েছেন। ২৪ হাজার ৬১৩ ভোট বেশী পেয়ে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-
কিশোরগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক বিজয়ী হন। ৭ জানুয়ারি রাতেই জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ তাঁকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার ১৬৯টি কেন্দ্রে
আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক তাঁর কাঁচি প্রতিকে ৬৯,৯১৪ ভোট পেয়ে 
নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মোখছেদুল মোমিন ট্রাক প্রতিকে ভোট পেয়েছেন ৪৫,৩০১ টি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী  বর্তমান সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান পেয়েছেন ৪১,৩১৩। এ আসনে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও লড়াই হয়েছে ত্রিমুখী।  বাকী ৪ দলের চার প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে ছিলেন নামকাওয়াস্তে।  ওইসব প্রার্থীদের মধ্যে তৃণমূল বিএনপির ড.আব্দুল্লাহ আল নাসের সোনালী আঁশ প্রতিকে ৬৭৩ ভোট,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সাজেদুল করিম নোঙর প্রতিকে ২৮৪ ভোট,জাসদের আজিজুল হক মশাল প্রতিকে ১৮৮ ভোট এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুল হাই সরকার আম প্রতিকে ভোট পেয়েছেন ১৭৫ টি। এ আসনে মোট ভোটার ছিল চার লাখ ২৬ হাজার ৮৭ জন। সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জের১৬৯ টি ভোট কেন্দ্রে ভোট পড়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৭০ টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে দুই হাজার ৬২২ ভোট। ভোটের হার ৩৭.৬৬℅ ভাগ। ফলাফলে দেখা গেছে বিজয়ী প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক সৈয়দপুরে মোট ৯১ টি কেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন ৫০ হাজার ৭১৭ ও কিশোরগঞ্জে ৭৮ টি কেন্দ্রে পেয়েছেন ১৯ হাজার ১৯৭ ভোট। অপরদিকে একইভাবে পরাজিত প্রার্থী ট্রাক প্রতিকের মোখছেদুল মোমিন সৈয়দপুরে ২৮ হাজার ৭৮১ ও কিশোরগঞ্জে ১৬ হাজার ৫২০ ভোট এবং বর্তমান সংসদ সদস্য লাঙ্গল প্রতিকের আহসান আদেলুর রহমান আদেল সৈয়দপুরে ৫ হাজার ৯১০ এবং কিশোরগঞ্জে ৩৫ হাজার ৪০৩ ভোট পেয়েছেন। এদিকে ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রগুলো থেকে ফলাফল ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিদ্দিকের কর্মী ও সমর্থকরা আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন। শুরু হয় মিস্টি বিতরণ। পাড়া মহল্লায় বের হয় আনন্দ মিছিল। বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে হাজার হাজার মানুষজন নব নির্বাচিত সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিককে ফুলের মালা ও পুষ্পবর্ষণের মাধ্যমে অভিনন্দন জানান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক বলেন, এবারে নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে জনগনের চাহিদার 
প্রতিফলন ঘটে। গত পৌর নির্বাচনেও জনগন আমার পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু সে সময় ব্যাপক কারচুপি করে জনগনের রায় কেড়ে নেওয়া হয়। তবে  এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কারণে জনগন তাদের সে সময়ের অনিয়মের জবাব দিয়েছে ব্যালটের মাধ্যমে। তিনি বলেন,সৈয়দপুর ও কিশোরগঞ্জের উন্নয়নের প্রত্যাশায় জনগন আমাকে তাদের ভোট ভালবাসায় নির্বাচিত করেছে। আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ ও ঋণী। আমি তাদের সেই প্রত্যাশা পুরণ করতে যা যা করার দরকার তাই করবো। আমার প্রিয় জনগনকে সাথে নিয়ে তাদের পরামর্শে কাজ করবো। এজন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।