Image

সাতক্ষীরা-৩ আসনে ডা. শহিদুল আলমের মনোনয়ন দাবিতে উত্তাল কালিগঞ্জ

আবু হাসান: সাতক্ষীরা-৩ (কালিগঞ্জ-আশাশুনি) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ঘোষিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী কাজী আলাউদ্দীনের মনোনয়ন বাতিল করে গণমানুষের কাছের মানুষ গরীবের ডাক্তার খ্যাত অধ্যাপক শহিদুল আলমকে মনোনয়ন প্রদানের দাবিতে কালিগঞ্জে একের পর এক কর্মসূচি পালন করছেন দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। সোমবার মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণার পরপরই রাতে বিক্ষোভ সমাবেশ, পরদিন (মঙ্গলবার) সকাল থেকে নলতায় অর্ধদিবস হরতাল, মহাসড়ক অবরোধ, বিকেলে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের পর এবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে হাজার নারী-পুরুষ। 

বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা সদরের ফুলতলা মোড় থেকে উত্তর কালিগঞ্জ বাসটার্মিনাল পর্যন্ত মহাসড়কের দু’পাশে দাড়িয়ে স্মরণকালের দীর্ঘ এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ‘ডা. শহিদুল আলমের নামিনেশন দিতে হবে দিতে হবে’, ‘হঠাও কাজী, বাঁচাও ধানের শীষ’, ‘ভন্ড কাজীর নমিনেশন, মানি না মানবো না’, ‘চিটার কাজীর নামিনেশন, বাতিল হোক বাতিল হোক’সহ বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন। 

 

ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য শেখ নুরুজ্জামান, উপজেলা বিএনপির সাবেক ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান পাড়, উপজেলা বিএনপির সাবেক স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক এসএম হাফিজুর রহমান বাবু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও ইউপি সদস্য শেখ খায়রুল ইসলাম, তারালী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ালিদ হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শেখ আলাউদ্দীন সোহেল, সদস্য সচিব শেখ আব্দুল আজিজ, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফরহাদ সাদ্দাম, সদস্যসচিব শেখ পারভেজ ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য খোদেজা খাতুন, সাবেক ইউপি সদস্য সালেহা বেগম, বিএনপি সমর্থক রাজিয়া খাতুন, রেহানা বেগমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। ঘোষিত মনোনয়ন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তারা বলেন, সাতক্ষীরা-৩ আসনে গরীবের ডাক্তার জননেতা শহিদুল আলমের কোন বিকল্প নেই। দলের মহাসচিব সাতক্ষীরা-৩ আসনে কাজী আলাউদ্দীনকে প্রার্থী ঘোষণা করায় কালিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার মানুষ চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও হতাশ। দলের নীতি নির্ধাকরা এ এলাকার জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা অধ্যাপক ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দিয়ে সাবেক জাপা নেতা কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দিয়ে বিএনপিকে চিরতরে বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। দ্রুত এ মনোনয়ন বাতিল করে ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, দলের হাইকমান্ড যদি জনগণের মনের ভাষা বুঝতে না পারে তাহলে নিশ্চিতভাবে সাতক্ষীরা-৩ আসন টি হারাতে হবে। প্রার্থী পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত হরতাল, অবরোধ, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, কাফনের কাপড় নিয়ে অনশন কর্মসূচি পালনসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রয়োজনে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে আন্দোলনরত নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। 

 

এদিকে উপজেলা বিএনপির সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব জানান, কাজী আলাউদ্দীনের কর্মী সমর্থক ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সহিংস আচরণ শুরু করেছে। শুধু তাই নয় মনোনয়নের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের জন্য প্রচার মাইক বের করা হলে উপজেলা জিরণগাছা চৌমুহনী মোড় এবং রতনপুর এলাকায় মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। রতনপুর এলাকায় প্রচারের সময় উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব আরিফুর রহমান ছোটন এর নির্দেশে একটি মাইকসেট ও ব্যাটারিও ছিনিয়ে নিয়ে যায় তার ক্যাডার বাহিনী। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় দলীয় নেতাকর্মীরা ধলবাড়িয়া এলাকার মাদার চন্দ্র খার ছেলে সুব্রত খা ওরফে ভঞ্জন (৩৮) নামে একজনকে ধরে থানায় নিয়ে আসেন। আটক সুব্রত খা কৃষকদল নেতা ছোটনের নির্দেশে শরিফুল ও সাদিকুল নামে আরও দু’জনের সহযোগিতায় প্রচারগাড়ি থেকে মাইক সেট ও ব্যাটারী ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। পরবর্তীতে বিএনপির দু’গ্রুপের নেতাদের মধ্যস্থতায় কৃষকদলের সদস্য সচিব মাইকসেট ও ব্যাটারি থানায় জমা দিয়ে আটক সুব্রতকে মুক্ত করেন। এঘটনায় বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রচার মাইক ভাঙচুর, মাইকসেট ও ব্যাটারি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সুব্রত খা নামে এক ব্যক্তিকে আটকের পর ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।