Image

একগুচ্ছ ছড়া কবিতা

ঋতি ও গুলাবার গল্প
মাহফুজ ফারুক

দুধ শাদা রঙ চিক্ চিক্ চিক্। কী অপরূপ রূপ!
হাজার বরফ পাহাড়গুলোয় নীরব ও নিশ্চুপ।
একটা পাহাড়, দুইটা পাহাড়, পাহাড় দ্যাখো কত!
হিম হিম হিম ঠাণ্ডা বাতাস বইছে অবিরত।

পাহাড় থেকে ঝর্ণাগুলো ডাকলো নেচে গেয়ে
সেই পাহাড়ে উঠলো ঋতি পরীর মতো মেয়ে।
এক পাশে তার বাবা এবং একপাশে তার মা’য়
আগলে রাখে আঁচড় যেন না লাগে তার গায়।

যে পাহাড়ে উঠল ঋতি গুলাবা তার নাম
পাহাড় তো নয় এইটা যেন স্নো’য় ভরা খাম।
দু’হাতে তার একটা স্নো মাথায় তুলে পোজ
বাবার হাতে ক্যামেরা তখন ক্লিক ক্লিক ক্লোজ।

ঋতির জন্য গুলাবা তো আনন্দে ঝিলমিল
গুলাবা আর ঋতির মাঝে কী অপরূপ মিল!
কী ছিলো মিল কী ছিলো মিল? জানবে সুনিশ্চয়-
গুলাবা ও ঋতির হাতে এক স্নো-ই কী নয়?

যাচ্ছে সময় ফিরতে হবে ডাকল খালামণি
ঋতির মনে প্রশ্ন তখন- ক্যান যাব এক্ষুনি?
গুলাবা তো কাঁদবে এখন আরেকটু তো খেলি
তবু- হাঁটলো দু’পা ফেলি।

যাচ্ছে ঋতি পাহাড় ছেড়ে, কাঁদছে গুলাবা
এই যে তুমি যাচ্ছো কোথায়? আবার কী আসবা?
বললো ঋতি- কান্না থামাও, যাচ্ছি বাংলাদেশে
আবার আমি আসব সত্যি, রাজকুমারীর বেশে।


টুনটুনি
ইবরাহীম আদহাম

বাড়ির কাছে ডালিম গাছে
ডাকে পাখি টুনটুনি
মিষ্টি সুরে ডাক দিয়ে যায়
বাজায় পায়ে ঝুনঝুনি।

মুক্ত স্বাধীন উড়ে বেড়ায়
উড়তে তাহার নেই মানা
একটুখানি ফাঁক পেলে সে
দেয় ছড়িয়ে তার ডানা।

ডুমুর গাছে বুনায় বাসা
শুভ্র নরম তুলিতে
পোকামাকড় কাছে পেলে
জলদি ভরে ঝুলিতে।

একটু আড়াল খুঁজে বেড়ায়
মনে তাহার ভীষণ ভয়
লতাপাতার ফাঁক ফোকরে
মিষ্টি সুরে কথা কয়।

 

নাতির সেবা
আহাদ আলী মোল্লা

ভালোভাবে দাদা চলতে পারে না
লাঠি ভর দিয়ে হাঁটে,
বাতের ব্যথায় কুঁকিয়ে কুঁকিয়ে
রাত-দিন তার কাটে।

শুয়ে সুখ নেই বসে সুখ নেই
দাঁড়ালে দু’হাত কাঁপে
মাঝে মাঝে ভাবি ফুরিয়েই গেল
উচ্চ রক্তচাপে।

দাদি বেঁচে নেই হুকুম হাকামে
দাদার ভরসা আমি,
ছোটদের মতো দাদা প্রতিদিন
করে কত পাগলামি।

আমি খুব তার কাছাকাছি থাকি
জাগরণে কি বা ঘুমে,
যেই দরকার পড়ে তাকে ধরে
নিয়ে যাই বাথরুমে।

খাবার দাবার পানি এনে করি
আদর যত্ন খাতির,
বুড়ো হলে যেন আমিও এভাবে
সাহায্য পাই নাতির।

 

ইচ্ছে
শাজাহান কবীর শান্ত

ইচ্ছে করে ময়ূর ডানায়
হরেক রঙে সাজি
ঝলকে উঠি পেখম পরে
বৃত্তাকারে আজই।

ধানের মাঠের ইঁদুর হয়ে
কিংবা মায়ের সিঁদুর হয়ে
কপাল জুড়ে রাঙি,
বিদ্ঘুটে সব মিথ্যাগুলো
সত্য দিয়ে ভাঙি।

আমার মনে ইচ্ছেগুলো
মাথার ভেতর ঘোরে,
বাস্তবে তা উঠতে মেতে
আঘাত হানে জোরে।

 

খুকুর বিড়াল
সুপান্থ মিজান

খুকুর বিড়াল নামটা পুষি,
ইঁদুর মেরে হয় সে খুশি।
ঘরের কোণে ব্যাঙ
মারে না সে ক্যান?
চায় খুকু তা জানতে।

টিকটিকি ও তেলাপোকা
দেয় খুকুরে ভীষণ ধোঁকা,
পড়তে যখন বসে
পোকাগুলো আসে,
পারে না সে মানতে।

পুষি বিড়াল বুঝতে পারে
পোকামাকড় সবই মারে
আর থাকে না ভয়
খুকু খুশি হয়।

খুকুকে খুব ভালোবাসে
তাইতো থাকে পাশেপাশে
হয় না বাহির রাতে
ঘুমায় খুকুর সাথে।

 

আমার দেশ
আরিফ আনজুম

শাপলা শালুক বিলে-ঝিলে
যখন জলে ফোটে,
আমার দেশের পাখ-পাখালি
দূর আকাশে ছোটে।

রাখাল ছেলের কণ্ঠ-স্বরে
মিষ্টি মধুর সুরে,
কৃষাণ যেন যায় হারিয়ে
নব্য অচিনপুরে।

পূবেল হাওয়া পাতায় পাতায়
বাজায় মোহন বাঁশি
দুপুর রোদে ঝিঁ ঝিঁ সুরে
শুকনো পাতার হাসি।

সন্ধ্যার আকাশ হাতছানিতে
চাঁদ মামাকে ডাকে,
জোনাক পোকা ছড়িয়ে আলো
রাতটা মেতে রাখে।

মানবকণ্ঠ/জেএস