Image

কৈ মাছের পুঁটি উদ্ধার

পুঁটি মাছের দুটি পোনা। পুটিন ও পোটন। সারাদিন ছোটাছুটি করে। এ ঝোপ থেকে ও ঝোপে ঘুরে বেড়ায়। মা কতো করে বলে, ‘বাসা থেকে বের হোস না। ফেলে রাখা লোভনীয় কোনো খাবার মুখে নিস না। যে কোনো সময় বিপদ হতে পারে।’ নাহ, কে শোনে কার কথা! মাকে ফাঁকি দিয়ে কখন যে ঝোঁপ থেকে বের হয়ে যায়, বোঝা কঠিন।

রাত হলে মা গল্প শোনায়। ফাঁদের গল্প। জাল ও বড়শির গল্প। টোপ ও ভয়ের গল্প।
সকাল হতে দেরি, সেসব ভুলতে দেরি হয় না তাদের।

খানিক দূরে একটি গর্তে কৈ মাছ বাস করে। বুড়ো কৈ। ছানাপোনা নেই। একা। পুটিন ও পোটনের সঙ্গে তার সখ্যতা। দিনের বেশিরভাগ সময় এখানেই কাটে পোনা দুটির। কৈ মাছকে দাদু ডাকে তারা। ০০অনেক মজার মজার গল্প জানেন দাদু। রাজা-রানীর গল্প, বাঘ-হরিণের গল্প, কাক-কোকিলের গল্প, কুমির-শেয়ালের গল্পসহ আরো কত কী! বলতে গেলে শেষ হবে না। সেদিন ঘোড়া ও গাধার গল্প শুনে হাঁসতে হাঁসতে পুটিন ও পোটনের পেট ব্যথা হয়ে গিয়েছিল। খুবই মজার গল্প ছিল সেটি।

একদিন বিকালে মা-পুঁটি বাসায় ফিরে এসে দেখে তার পোনারা নেই। প্রথমে ভাবলো কৈ দাদুর কাছে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে হয়তো। বেলা বাড়তেই মায়ের মনে ছটফট শুরু হলো। পুটিন? পোটন? বলে ডাকতে ডাকতে কৈ-এর গর্তের দিকে গেল। হঠাৎ চোখে পড়ল একদলা খাবার ঝোলানো একটি বড়শি। দেখেই মায়ের বুকটা ধক করে ওঠল। এ ফাঁদে পোনা দুটো মুখ দেয়নি তো! মা আরও জোরে জোরে ডাকা শুরু করল। পুটিন?? পোটন???
পুঁটিমাছের কণ্ঠ শুনে গর্ত থেকে বেরিয়ে এলো কৈ। বলল,
-ওরা তো আজ আসেনি।
-আসেনি!
-না। আমি আরও ভেবেছি, তুমি হয়তো আসতে দাওনি।
কৈ-এর কথা শুনে পুঁটি কান্না জুড়ে দিল। বললো,
-বিপদ হয়ে গেছে...
-কী বিপদ?
-ওরা নিশ্চয়ই বড়শি গিলেছে।
-বলো কী!
-হ্যাঁ, আসার সময় বড়শির ফাঁদ দেখেছি আমি।

পুঁটি আবারও কান্না জুড়ে দিল- আমার এখন কী হবে গো... আমি কী নিয়ে বাঁচব!
কৈ মাছেরও কান্না পেল। পুটিন ও পোটনের জন্য মনটা কেমন যেন করে উঠলো তার।
এদিকে ঢাকনাওয়ালা একটি পাত্রের অল্প পানিতে লাফাচ্ছে পোনা দুটি। বড়শির আঘাতে গলা ফুটো হয়ে গেছে তাদের। রক্ত ঝরছে। এভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে মারা যাবে। মায়ের কথা খুব করে মনে পড়ছে। কত নিষেধ-বারণ করেছিল! তারা বুঝতে পারল, মা কখনো সন্তানের খারাপ চান না। মায়ের কথা শুনলে আজ এমন বিপদে পড়তে হতো না। একটু পরে হয়তো সত্যিই মারা যাচ্ছে তারা।
অন্যদিকে কৈ মাছ পুঁটিকে সান্ত¡না দিয়ে বলল,
-ধৈর্য ধরো। আমি ওদের উদ্ধার করব।
পুঁটি অবাক হয়ে বলল,
-কীভাবে?
-প্রথমে বড়শিতে ধরা পড়বো। তারপর ওদের কাছে গিয়ে এমন কিছু ঘটাবো যেন সবাই পালিয়ে আসতে পারি।
-এ তো খুবই ঝুঁকির ব্যাপার।
-তা বটে। কিন্তু ঝুঁকি না নিলে তো সুখি হওয়া যায় না। ওদের ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারবো না। চেষ্টা তো করে দেখি। সফল না হলে মারা যাব। বয়স তো আর কম হয়নি।
শোনো, একদম দেরি করা যাবে না। আমি যাচ্ছি।
পুঁটি হ্যাঁ-এর মতো করে মাথা নাড়ল।

কৈ মাছ গর্ত থেকে বেরিয়ে বড়শির কাছে গেল। খাবারের দলাটি গিলে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গেই টান লাগলো। আটকা পড়ল সে। বড়শি ওঠানো লোকটি যখন কৈ মাছটি পাত্রে রাখতে যাবে অমনি পিঠের ধারালো শক্ত কাঁটাগুলো তার হাতে বসিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গেই পাত্রটি হাত থেকে ছিটকে পানিতে পড়ে গেল। সঙ্গে মাছগুলোও। নিরাপদে পালিয়ে এলো সবাই।

পানির নিচে অপেক্ষা করছিল মা-পুঁটি। পোনাদের ফিরে পেয়ে আনন্দের সীমা নেই তার। কৈ মাছের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাল। তার সাহসী বুদ্ধির প্রশংসা করল। পুটিন ও পোটনের চরম শিক্ষা হলো। তারা শপথ করল, আর কখনো মায়ের অবাধ্য হবে না।

মানবকণ্ঠ/এইচকে