Image

ভালোবাসা

রাজশাহীর নওগাঁ থেকে দু’জনে বাসে উঠলাম। সকাল ৮টার বাস। ও কখনো বাসে ওঠার পর কথা বলে না। হয়তো ভয়ে। এর আগে একবার বলেছিল বুক ব্যথা করে, তাই কথা বলে না। কিন্তু আজ বাস ছাড়ার পরও কিছুটা পথ পর্যন্ত কথা বলল।
আচ্ছা, ‘ও’ টা কে?
‘ও’ এর সাথে আগে পরিচয় করিয়ে দেয়া যাক। নাম মিলা। বেশ ভালোই সুন্দরী। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পড়ছে। ক’দিন পরই মিলার ইন্টার্নি শুরু হবে। এ পর্যন্তই থাক।

বরাবরের মতো বাসে ওঠার পর আমার কাঁধে মাথা রাখল মিলা।

‘জানো, কিছু কিছু মানুষ এত খারাপ! ঠিক খারাপ তা না, আসলে মনমানসিকতায় সমস্যা বলা যেতে পারে। বুঝে উঠতে পারি না, মানুষ কেন এমন হয়।’
মিলা বলছিল আমায়। আমি ওর কাছে কারণ জানতে চাইলাম। কেউ কিছু বলছে? ও বলল, না। আবার শুরু করল।
‘ভার্সিটিতে ক্লাস টেস্ট, কোনো নোট কিংবা সাজেশন, অ্যাসাইনমেন্টের জন্য কারো কাছে হেল্প চাওয়া যায় না। কিছু বড় ভাইয়েরা আছে, তাদের কাছ থেকে কোনো সাহায্যের কথা ভাবা-ই যায় না। রাতে ফোন করে আজাইরা গল্প শুরু করবে। হেল্প করার প্রসঙ্গে কথা না তুলে জানতে চাইবে আমার কোনো রিলেশন আছে কিনা। সবাই দুর্বলতার সুযোগ খোঁজে। আচ্ছা, এসবের কোনো মানে আছে?
মিলার একথায় আমি হুম কিংবা তারপর এসব জাতীয় কিছু না বলে কিছুটা অবাক হলাম। ‘প্রেম করতে চাইবে। আচ্ছা, আমার তো পছন্দ বা অপছন্দ রয়েছে আর সাহায্যের মাঝে প্রেম আসবে কেন?’

কি হয়েছে সে কথা জানতে চাইলাম আমি।

মিলা-প্রেমের কথায় সাড়া না দিয়ে সাহায্য লাগবে না বলে ফোন রেখে দেই। তখন দেখি ফোন করার জন্য অজুহাত খোঁজে। বুঝি, ফোন নম্বর দেয়াটা আমার ভুল ছিল। তবে সবাই যে খারাপ তা কিন্তু নয়। এর মাঝে অনেকে ভালোও রয়েছে। মিলার কথা বলার মাঝে আমি ওর ইন্টার্নি সম্পর্কে জানতে চাইলাম। ইন্টার্নি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল মিলা।
তবে আল্লাহর রহমতে কোন রকম দৌড়-ঝাঁপ ছাড়াই ইন্টার্নির সুযোগ হয়েছে। পরিচিত এক বড় ভাইয়ের রেফারেন্সে দেশের নামি-দামি একটি ব্যাংকে ইন্টার্নি করবে। মিলা বলছিল আমাকে। বলল, এক ভাইয়ের রেফারেন্সে ভালো একটি ব্যাংকে ইন্টার্নির সুযোগ হয়েছে। কিন্তু সে বড় ভাই! কিন্তু বলে থেমে গেল মিলা।
কিন্তু সে বড় ভাই কী, আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম।
‘জীবনে কী টাকা-পয়সা, গাড়ি-বাড়িই সব!’

মিলা আবার বলতে থাকল- ওই বড় ভাই আমাকে ইন্টার্নির সুযোগ করে দিয়েছে। এ জন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। সে অনেক ভালো পজিশনে আছে। তার হয়তো কোনোকিছুর অভাব নেই। তার কথা-বার্তায় মনে হয়, সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। মেয়ে মানুষদের সবাই দুর্বল প্রকৃতির প্রাণীভাবে বোধ হয়!

‘আরে না’- মিলাকে একথা বলে আমি বুঝাতে লাগলাম যে, হয়তো তুমি কিছু খারাপ মনমানসিকতার মানুষদের সাথে পরিচিত হয়েছে। সে জন্য তোমার কাছে এমনটা মনে হচ্ছে। পৃথিবীতে কি কোনো ভালো মানুষ নেই? প্রশ্ন রেখে আমি নিজেই আবার উত্তর দিলাম, এখনো অনেক ভালো মানুষ আছে।

আমার কাঁধে রাখা ওর মাথাটা একটু বাঁকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মিলা মুচকি হাসলো ও বলল, হ্যাঁ, অনেক ভালো মানুষ আছে। তাদের মধ্যে তুমি একজন। আমিও হেসে উঠলাম।

‘নাহ্, তুমি মোটেও ভালো মানুষ নও। অনেক খারাপ! খুব খারাপ। খারাপ না হলে কি তুমি...!’

মানবকণ্ঠ/এইচকে