Image

শালিক পাখির পাঠশালা

এক যে ছিল বন। বিশাল বন। সে বনে শুধু গাছ-গাছালি। ঝোপঝাড় আর জঙ্গল। অনেক পাখি থাকে সে বনে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা উড়ে বেড়ায়। যখন যেদিকে খুশি। বনের ঠিক মাঝখানে প্রকাণ্ড একটা বটগাছ। সেখানে পাখিদের ভিড়টা একটু বেশিই দেখা যায়। তবে সবদিন না। সপ্তাহে একদিন। সেদিন পুরো বটগাছজুড়ে পাখি আর পাখি। পাখিদের মেলা বসে যায়। এই বটগাছটাই হলো পাখিদের পাঠশালা। সপ্তাহে একদিন ওরা পড়তে আসে এখানে। কত্ত মজা!

বাকি ছয়দিন ওড়াউড়ি করো, লুকোচুরি খেলো, আকাশে ডিগবাজি খাও। কোনো নিষেধ নাই, মানা নাই কিন্তু সপ্তাহে একদিন সব পাখিকে এই পাঠশালায় আসতে হবে। আসতে অবশ্যই পাখিদের বেশ ভালোই লাগে। মনের আনন্দে গান গাইতে গাইতে ওরা চলে আসে।

পাঠশালা শুরু হয়েছিল খুব অদ্ভুতভাবে। এক দোয়েল ছানা আহত হয়ে বটগাছের নিচে পড়েছিল। বাবা-মাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। একটা শালিক পাখি ওকে সুস্থ করে তোলে। খাবার এনে খাওয়ায় কিন্তু ওর সময় আর কাটে না। এরপর ছানাটিকে মজার মজার ছড়া শোনায় শালিক পাখিটা। শালিক অনেক ছড়া, কবিতা আর গল্প জানত। দেখাদেখি অন্যসব পাখিদের ছানারাও এসে হাজির। তারা ছড়া শুনতে ভালোবাসে। গল্প শুনতে ভালোবাসে। মানুষের গল্প শুনে ওরা বেশি অবাক হয়। মানুষ নাকি উড়তে পারে না। আহ্, উড়তে পারবে কী করে ওদের তো পাখাই নেই। বেশ দুঃখ হয় ছানাদের। অল্প কয়েকদিনেই ছানারা অনেক মজার মজার ছড়াও শিখে ফেলে।

ছানাদের মেধা দেখে মুগ্ধ হয় শালিক পাখিটা। বটগাছে বেশ ভিড় জমে যায়। মা পাখি আর বাবা পাখিরা ব্যাপারটা খেয়াল করে। শালিককে অনুরোধ করে পাঠশালা খুলতে। খেলাধুলার পাশাপাশি ওরা পড়াটাও শিখে ফেলবে। তারা শালিককে অনুরোধ করে ছানা পাখিদের সপ্তাহে একদিন পড়ানোর জন্য। শালিক পাখির পাঠশালা শুরু হয়। পাঠশালার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। দূর-দূরান্ত থেকে মা পাখি আর বাবা পাখিরা তাদের ছোট ছোট ছানাদের নিয়ে আসে এখানে। গাছের উঁচু ডালে বসে থাকে বড় পাখিরা। আর ছানাদের নিয়ে শালিক বটগাছের মোটা শিকড়ের ওপর সার বেঁধে বসায়। আর পর শুরু হয় অ, আ, ক, খ শেখানো।

একদিন পাঠশালার কাছ দিয়েই যাচ্ছিল এক ভেটরে শিয়াল। পাখিদের ছড়া-কবিতা শুনে থমকে দাঁড়ায়। আরে!

এ তো দেখি শালিক পাখির পাঠশালা! পাখির ছানারা এখানে পড়াশোনা করছে। ওরা শিক্ষিত হয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের শিয়াল ছানারা দিনভর শুধু পড়ে পড়ে ঘুমায়। ওরা তো মূর্খ রয়ে যাবে। ‘আমাদেরও পাঠশালা খুলতে হবে’-একথা ভাবতে ভাবতে শিয়াল তার আস্তানার দিকে এগিয়ে যায়।

মানবকণ্ঠ/জেএস