Image

একগুচ্ছ ছড়া

ছড়া কবিতা


চশমা কোথায়?
ব্রত রায়

দাদুমনির চশমা কোথায়?
বসার ঘরের তাকের ওপর?
নেই তো! তবে স্নানের ঘরে?
রান্নাঘরের শাকের ওপর?

কে নিয়েছে? কে নিয়েছে?
দোষ চাপাবে কাকের ওপর?
হন্যে হয়ে খুঁজছে দাদু
দাম কি সেটার লাখের ওপর?

উঁহু। এটা দরকারি চিজ
থাকতে হবে নাকের ওপর
হঠাৎ দেখে আয়নাতে সে
চশমা আছে টাকের ওপর!

 

খুনসুটি
ঝুমা আক্তার

খোকা আঁকে ছবি আর খুকি পড়ে বই
ইংরেজি শেখে খুকি ‘কার্ড মানে দই’।

আঁকাআঁকি খোকনের খুব বেশি শখ
আজ তার আঁকা হলো সাদা এক বক।

খোকা হবে বড় হয়ে আর্টিস্ট ম্যান
এই কথা শুনে খুকি করে ঘ্যান ঘ্যান।

খুনসুটি দুজনের লেগে থাকে খুব
খোকা যদি কথা বলে খুকি কয় চুপ।

মাঝে মাঝে খুকি খায় আম্মুর মার
মার খেয়ে বেলা কাটে কান্নাতে তার।


কোথায় আছিস তুই?
আহমাদ স্বাধীন

রোদ-কুয়াশার ঝাপসা
ভোরে স্বচ্ছ শিশির ফোঁটা
জমে থাকে ঘাসের ডগায়,
হয়নি বদল ওটা।
হয়নি বদল সূর্যের রং, হয়নি বদল বায়ু
দিন, মাস, সাল পেরিয়ে কিছু ক্ষয় হয়েছে আয়ু।
ফুটছে আজো হাসনা হেনা, টগর বেলি জুঁই
ছোট্ট বেলার খেলার সাথী,
কোথায় আছিস তুই?

কোন মুলুকে কেমন আছিস
নেই তা আমার জানা
কেয়া পাতার ঝোপে আজও ডাকে ঘুঘুর ছানা
ডাকে চড়ুই শালিক পাখি কাঠাল গাছের শাখায়
রোদের ছটা ঝিলিক মারে সাদা বকের পাখায়।
গাঁয়ের ছবি, গাছ, নদী, মাঠ,
আগের মতোই আছে
তুই রয়েছিস কোন রাজ্যের
কোন পাহাড়ের কাছে?

কোন শহরের ঘুপচি গলির ছোট্ট বেলকুনিতে
দাঁড়িয়ে কী তোর ইচ্ছে হয় না
বন্ধুর খোঁজ নিতে?

ছাড়াবাড়ির দেয়াল ঘেঁষা ঘোলা পানির খালে
সবার আগে তুই আর আমি
যেতাম সাত- সকালে
ভাটির টানে শুকিয়ে
যেতো খালের পানি সব
উঠতো জমে দুই
কিশোরের মাছ ধরা উৎসব।

গুলতি নিয়ে বাঁশের ঝাড়ে, বেত বাগানের কাছে
ডাহুক খোঁজা দুপুরগুলো তোর কি মনে আছে?
খালপাড় আছে আগের মতোই,
আছে বাঁশের ঝাড়
তোকেই কেবল কোথাও খুঁজে
পাচ্ছি না তো আর।

পাচ্ছি না সেই লাটাই লাটিম,
হলদে পাখির শিষ
হারিয়ে যাওয়া বন্ধু রে তুই কোথায় ঘুমাচ্ছিস?


আঁকিয়ে
তোরাব আল হাবীব

মাঠ এঁকেছে সোনামণি
ঘাস এঁকেছে সবুজ
ধান এঁকেছে সোনার বরণ
কে বলে সে অবুঝ?

বাবুইপাখির বাসা যেন
সত্যি গড়া খড়ে
বৃষ্টিভেজা কাশের বাগান
ভাঙবে বুঝি ঝড়ে।
আঁকাবাঁকা খাল-নদীতে
উথলে ওঠা ঢেউ
সেই পানিতে নৌকা বেয়ে
যাচ্ছে যেন কেউ।

সোনামণি তুলির ভাঁজে
আঁকতে পারে সব
আকাশ-মাটি, সাগর-চূড়া
নয় তা অসম্ভব।


আমি ও ফড়িং
খায়রুল আলম রাজু

ঘাসের ডগায় ফড়িং ছানার
কত্তো যে পাগলামি,
সকাল তখন মায়ের পাশে
শুইয়ে ছিলাম আমি।

উড়ছে ঘাসে এবং আবার
সর্ষে বাগান ছেড়ে,
ধানক্ষেতে যায়, নদীর বাঁকে
লেজটা নেড়ে-নেড়ে...

দরজা খুলে বাইরে আসি
ছুটি তারই পিছে;
ঘরেই আছি আম্মু ভাবেন
বালিশ লেপের নিচে!

হয় না ধরা, ছুটছি মিছে
ফড়িং ছানাই জিতে!
কান ধরে মা, বললো বোকা
কেউ কি বেরোয় শীতে?

মায়ের কথায় অবাক আমি
ভাবতে থাকি নিজে
কেউ কি কোথাও, ধরতে ফড়িং
শিশিরে গা ভিজে?