'ভূতিয়ার বিল ভ্রমণ'
- Dec 03 2025 18:21
'ভূতিয়ার বিল ভ্রমণ'----
তখন সবেমাত্র ক্লাস সেভেনে উঠেছি। স্কুল থেকে ফিরেই দেখি ছোট খালু এসেছে। সানন্দে তাকে গ্রহণ করলাম, কিন্তু লক্ষ্য করলাম মামার মনটা খুব ভালো নেই। ও জানিয়ে রাখা ভালো আমার নিজের কোন মামা না থাকায় ছোট খালুকে আমরা মামা ডাকতাম। জানতে পারলাম আমার নানী অসুস্থ, তাই মামা আমাদেরকে নিতে এসেছে। আব্বু ছিল অফিসে, আমরা তখন যশোর বেইজে থাকতাম। আম্মুর স্কুল থেকে আম্মুও ফিরলেন। আমরাও রওনা হলাম নানী বাড়ির উদ্দেশ্যে। তখন আসলে মন খারাপ বোঝার মত বয়স আমাদের হয়নি। সাধারণত বছরে একবার নানী বাড়ি যাওয়া হতো তাই উত্তেজনার কমতি ছিল না। আমি, আমার মা, ছোট ভাই এবং কোলে আমার ছোট্ট বোন রওনা হলাম নানীবাড়ির উদ্দেশ্যে।
তখন বর্ষাকাল, জানিয়ে রাখা ভালো- আমার নানী বাড়িটা ছিল তেরখাদা উপজেলার কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামে। আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা তখনও পৌঁছায়নি ওখানে। যেহেতু বর্ষাকাল তাই রাস্তা ও ছিল কর্দমাক্ত। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। তেরখাদা বাজারে এসে মামা বললেন- "বিকাল হয়ে গেছে এখন তো ওই দিকের কোন ভ্যান গাড়ি পাওয়া যাবে না। তাছাড়া রাস্তায় কাঁদা। ভ্যান গাড়ি ঠেলে ঠেলে যেতে হবে। সাথে বাচ্চাকাচ্চা এদের তো কাদার ভিতর হাঁটার অভ্যাসও নাই, তাহলে কী করা যায় আপা?" সন্ধ্যার আগে তো আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে, এখানে তো কারেন্টেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা চললাম ভূতিয়ার বিলে নৌকার খোঁজে। কিছু কিছু নৌকা আছে যারা এপার থেকে ওপারে মানুষকে পার করে দেন। কেউবা বড়শিতে মাছ ধরে নৌকা নিয়ে আবার কেউ বা শাপলা শালুক তুলে বাজারে বিক্রি করে। এদিকে আমার মায়ের তো চিন্তার কমতি নেই, ছোট ছোট বাচ্চা- আমি বড়, একটাও সাঁতার জানে না। এদিকে তো আমাদের আনন্দের শেষ নেই, নৌকায় চড়ে আমরা ভূতিয়ার বিল পাড়ি দেবো। কথিত আছে এই বিলে নাকি ভূত দেখা যায়, তাই নাম হয়েছে ভূতিয়ার বিল। রাতের বেলায় প্রদীপ হাতে করে জুজু বুড়ি বিল প্রদক্ষিণ করে। বর্ষাকালে কুমিরও দেখা পাওয়া যায়। শুকনা মৌসুমে কুমিরের কঙ্কালও পেয়েছেন অনেক কৃষক। ভয়ে কাচুমাচু দিয়ে আমার মা আমাদেরকে নিয়ে উঠলেন নৌকায়। নৌকায় উঠার পরে এক অপরূপ দৃশ্যে দু'চোখ আন্দোলিত হয়ে উঠলো। চারিদিকে শুধু লাল আর সাদার সমাহার। সেটা ছিল শালুকের পাতার ফাঁকে ফাঁকে লাল পদ্ম আর সাদা শাপলার এক বিশাল সমাবেশ। সেই সাথে নৌকা থেকে টেনে টেনে শাপলা আর পদ্ম ফুল তোলার এক অদ্ভুত আনন্দ।
গাংচিলগুলো যেন মনের আনন্দে লাল পদ্মের রশনিঃসৃত জলে স্নানটা সেরে নিচ্ছে। আর মুখটা তুলে লাজুক নতুন বউয়ের মত ঘোমটা টেনে দিচ্ছে। চারিদিকের সেই ভয়ংকর শান্ত সুন্দরের ভেতরে নিজেকে ধরে রাখা সত্যিই মুশকিল। কিছু সময়ের জন্য নিজেকে তেপান্তরের সেই রাজকুমারির মতো মনে হচ্ছিল যে কিনা ময়ূরপঙ্খী নৌকা ভিড়িয়ে ছুটে চলে নীল সাগরের পানে। হঠাৎ করে মামা বলে উঠলো- "ডায়রি আনোনি? একটা গল্প লিখে ফেলো না, বান্ধবীদের কাছে যেয়ে তো গল্প বলতে হবে, সারা জীবন এই স্মৃতিটা ধরে রাখতে হবে না!! "
রাখিনি সে দিন। সেই ধরে রাখার সময়টা বুঝি আজ হল।
-ফারহানা পারভীন, উন্নয়ন কর্মী।
আরো সংবাদ
'ভূতিয়ার বিল ভ্রমণ'
- Dec 03 2025 18:21
শ্যামনগরে ২০ টি কদবেল গাছ কেটে অবৈধভাবে জমি দখল
- Dec 03 2025 18:21
বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সৈয়দপুরে দোয়া মাহফিল
- Dec 03 2025 18:21
সর্বশেষ
Weather
- London, UK
13%
6.44 MPH
-
23° Sun, 3 July -
26° Sun, 3 July





