Image

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে জলাবদ্ধ জমিতে ‘পানিফল’ চাষে লাভবান কৃষক

শেখ ইকবাল আলম বাবলু, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে অপেক্ষাকৃত নিচু ও জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। স্থানীয়ভাবে ‘সিংড়া’ নামে পরিচিত সুস্বাদু পানিফল অন্যান্য ফলের তুলনায় দামেও কম। রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। এজন্য দিনদিন সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠছে পানিফল।
কালিগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ আবু লতিফ জানান, এ বছর উপজেলায় ১১৫ একর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। এর অর্ধেকেরও বেশী চাষাবাদ হয়েছে উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সোনাতলা, উত্তরশ্রীপুর, বেড়াখালী এলাকায়। এছাড়াও উপজেলার বিষ্ণুপুর, ভাড়াশিমলা, নলতা এলাকায় পানিফল চাষ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অন্য ফলের পাশাপাশি পানিফল বাজার দখল করতে শুরু করায় দিনে দিনে চাহিদা বাড়ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলটি ছোট বড় সব মানুষের পছন্দের। এ ফলের ইংরেজি নাম ডধঃবৎ পযবংঃহঁঃ এবং উদ্ভিদতাত্তি¡ক নাম ঞৎধঢ়ধ নরংঢ়রহড়ংধ। পানিফলের আদিনিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পানিফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পানিফলের আরেক নাম ‘সিংড়া’। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। বর্ষা মৌসুমে এফলের চাষ হয়। জলাশয় ও বিল-ঝিলে এ ফলটি জন্মে। মূলত: যেখানে জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধানের চাষ সম্ভব হয় না সেখানেই পানিফল চাষ করা হচ্ছে। পানিফলের একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। আশি^ন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত পানিফল উৎপাদন হয়। এফলের পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাঁস। কাঁচা ফলের নরম শাঁস খেতে বেশ সুস্বাদু। পানিফল সাধারণত কাঁচা খাওয়া যায়। তবে সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। কাঁচা পানিফল বলবর্দ্ধক, এটি দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। ফলের শুকনো শাঁস রুটি করে খেলে এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ উপশম হয়। পিওপ্রদাহ, উদরাময় ও তলপেটের ব্যথ্যা উপশমে পানিফল খাওয়ায় প্রচলন রয়েছে। বিছাপোকা কামড়ের যন্ত্রনায় থেঁতলানো কাঁচা ফলের প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে এ ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, সে কারণে অনেকের কাছে এটি ডায়াবেটিস ফল নামে পরিচিতি পেয়েছে। পানিফল এর উৎপাদন খরচ খুব কম। লাভজনক হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলার সব উপজেলায় জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। সেই সাথে বাড়ছে ফলটির জনপ্রিয়তা। ইতোমধ্যে কালিগঞ্জের হাট-বাজারে পানিফল উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতিকেজি পানিফল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পরবর্তীতে স্থানভেদে প্রতিকেজি পানিফল ২০ থেকে ২৫ টাকায় মিলবে।

উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের এলাহীবক্স ঢালীর ছেলে ইসমাইল ঢালী (৫০) জানান, এ বছর তিনি ৬ বিঘা (দুই একর) জমিতে পানিফল চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের সঠিক পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় পানিফল চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তিনি।

পানিফল চাষী সোনাতলা গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মেহেদী হাসান (৩৫), মোবারক হোসেনের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৩৮), উত্তরশ্রীপুর গ্রামের মাজেদ গাজীর ছেলে আবু তালেব গাজী (৪০), বেড়াখালী গ্রামের ইয়াদ আলীর ছেলে আজগর আলী (৩৮)সহ আরও কয়েকজন জানান, হারিসহ প্রতিবিঘা জমিতে পানিফল চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। উৎপাদন ভাল হলে এবং আগেভাগে বাজারজাত করতে পারলে প্রতিবিঘা জমি থেকে ৯০ হাজার থেকে ১লাখ ২০ হাজার টাকার পানিফল বিক্রি করা যায়। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধানের চাষ করতে না পারলেও সিংড়া (পানিফল) চাষ করে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। এজন্য অনেকেই পানিফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়াসিম উদ্দীন জানান, লবনের প্রভাব কাটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিকে এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। এটি এঅঞ্চলের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। মৌসুমী এ ফল চাষ করে কৃষক যাতে লাভবান হয় সে ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে।