Image

অবৈধভাবে পরিচালনা করা সৈয়দপুর  ফাইলেরিয়া হাসপাতাল সিলগালা

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি : স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন না থাকা সত্বেও হাসপাতাল পরিচালনা করে 
আসছিল সংশ্লিষ্টরা। এমনকি ফাইলেরিয়া রোগের কোন আলামত না থাকলেও রোগীকে দেওয়া হতো ফাইলেরিয়া রোগের চিকিৎসা, সেবনের জন্য দিত নিম্ন:মানের ওষুধ। এসব চিকিৎসা দিতো চিকিৎসকরা। ফলে দিনের পর দিন প্রতারিত হয়ে আসছিল চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী তাদের স্বজনেরা। হাসপাতালটিও পরিচালনা করা হতো রংপুর থেকে। কিন্তু হাসপাতাল চালানোর জন্য যে সব নিয়ম মানা বাধ্যতামূলক, তার কোনটাই ছিলোনা প্রতিষ্ঠানটির। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে  নীলফামারীর 'সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাব' সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এসময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন রোগীকে নীলফামারী সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। বুধবার (১২ জুন) দুপুরে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় ‘সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাব' এ অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করেন  নীলফামারীর সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা: আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এ সময় সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা: আতিয়ার রহমান শেখ সৈযদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. আলতাফ হোসেন সরকারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযান পরিচালনাকালে সিভিল সার্জন দপ্তরের আভিযানিক দলের সদস্যরা হাসপাতালের ডিসপেনসারিতে যান। এসময় সেখানে থাকা বিভিন্ন নিম্ন:মানের ওষুধ পান তারা। এছাড়া ইউনানী কোম্পানির ওষুধেরও অস্তিত্ব মেলে। সেখানে দেখা মেলে কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা এক নারী রোগীর। হাসপাতালের লোকজন মুঠোফোনে রংপুরে কোন একজনের সাথে কথা বলে ওই রোগীকে ফাইলেরিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থাপত্র দেন। সেখানে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে ওই রোগীকে পরীক্ষা করে দেখতে পান ফাইলেরিয়া নামের কোন রোগের আলামত তাঁর পাঁয়ে নেই। এসময় গুগলে সার্চ করে ফাইলেরিয়া রোগের প্রাথমিক লক্ষণও দেখানো হয়। যা ওই নারী রোগির ছিলোনা। এবিষয়ে ওই মহিলাকে কেন ফাইলেরিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হলো চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন উত্তর দিতে পারেননি। এসময় হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের যেসব অনুমোদিত কাগজপত্রের দরকার, তার কোনটাই দেখাতে পারেননি তারা। ফলে হাসপাতালটির সকল বিভাগসহ মুলফটক সিলগালা করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নীলফামারী সিভিল সার্জন ( ভারপ্রাপ্ত)  

ডাঃ আবুহেনা মোস্তফা কামাল বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরা যাচাই করে দেখতে পাই  ফাইলেরিয়া হাসপাতালের অনুমোদন নেই। এছাড়া এ হাসপাতালে নিয়মিত কোনো চিকিৎসক, নার্স, ল্যাব টেকনেশিয়ান, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সেসব সুবিধা থাকা দরকার সেগুলোর কিছুই নেই। তাই হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়েছে। এখানে যে দুইজন রোগী ছিল তাদের সদর জেনারেল হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ।

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন জেলাসহ  উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ফাইলেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এ রোগের চিকিৎসার জন্য প্রায় দুই যুগ আগে  জাপান সরকারের সহায়তায় সৈয়দপুর পৌর এলাকার সীমান্তবর্তী কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছে যাত্রা শুরু করে ফাইলেরিয়া হাসপাতালটি। যা বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান। জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় হাসপাতালের জন্য দুটি বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়। হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় ১৮ জন দেশি-বিদেশি চিকিৎসককে নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করেন। জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকেও গবেষণাকর্মীরা আসেন এখানে। তবে ২০১২ সালে হাসপাতালকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সংকট সৃষ্টি হয়। পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বে ভেঙে পড়ে সেবা কার্যক্রম। ফলে মুখ ফিরিয়ে নেয় দাতা সংস্থাগুলো। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার প্রত্যয়ে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রাকিবুল ইসলাম তুহিন পরিচালকের দায়িত্ব নেন। তিনি রংপুরে থেকেই হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছিলেন। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন করে প্রায় ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর কয়েকমাস পরে বেতন-ভাতা না পেয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনও করেন। অনেকে নিরুপায় হয়ে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। কিন্তু সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় আবারও বিভিন্ন পদে অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই হাসপাতালের কর্মকান্ড ও বৈধতা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন ওঠে। সম্প্রতি এনিয়ে সাংবাদিকরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে হাসপাতালের লোকজন তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণও করে। আর এভাবেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।  এদিকে হাসপাতাল সিলগালা করার পর থেকে এলাকাবাসী মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে বিভিন্ন অনিয়মের কথা।