Image

নিজ শহরে ফুলেল শুভেচ্ছায় ক্রিকেটার সাকলাইনকে বরণ করলো সৈয়দপুরবাসী

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে : সদ্য শেষ হওয়া ইমার্জিং এশিয়া কাপের জমজমাট ফাইনাল শেষে নিজ শহর নীলফামারীর সৈয়দপুরে হাসিমুখে ফিরলেন দেশের সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটার আব্দুল গাফফার সাকলাইন। ফাইনালে ব্যাট করতে নেমে নিশ্চিত পরাজয়ের কবলে পড়লে খেলাটি সুপার ওভারে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ -এ দলের হয়ে দারুণ পারফরমেন্স করা সাকলাইনকে  কাছে পেয়ে উচ্ছাসে মেতে ওঠে সৈয়দপুরের ক্রিকেটপ্রেমীরা।

 

বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ভালোবাসার শ্লোগানে প্রিয় সাকলাইনকে ফুলেল সংবর্ধনায় বরণ করেন তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও ভক্তরা। 

 

বাংলাদেশ জাতীয় এ দলে অভিষেকেই বোলিং, ব্যাটিং আর ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ নৈপুণ্য রেখে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা আব্দুল গাফফার সাকলাইন সৈয়দপুরে পা রাখতেই এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। 

 

এরআগে তাকে বরণ করতে বিমানবন্দরে হাজির হন আত্মীয়স্বজনসহ অসংখ্য ক্রিকেটপ্রেমী ও  শুভাকাঙ্খীরা। তাঁকে বহনকরা বিমান রানওয়ে স্পর্শ করেছে এমন সংবাদে খুশিতে মেতে ওঠেন তারা। বিমান থেকে নেমে বিমানবন্দরের মল ফটকে পৌছামাত্রই পুস্পবর্ষণের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত খেলোয়াড় সাকলাইনকে বরণ করা হয়। এসময় তাঁর গলায় মালা পড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানায় ভক্তরা। 

 

এ সময় সাকলাইনের আত্মীয়স্বজন, বাল্যবন্ধু এবং ক্রিকেটপ্রেমীদের উপস্থিতিতে উচ্ছাসে এলাকাটি মুখরিত হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিনের চেনা মুখ সাকলাইন জাতীয় পর্যায়ের তারকা হয়েও নিজ শহরে ফিরে সেই চেনা হাসিমুখেই মিশে যান সবার সাথে। 

 

সাকলাইনের শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর বন্ধু সাগির, সাকলেন, মেরাজসহ অন্যান্যরা জানান, আমরা একসাথে শহরের বাংলা হাইস্কুল মাঠে টেপ টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতাম। যেখানেই টেপ টেনিস ক্রিকেট, সেখানেই দেখা মিলতো সাকলাইনের। সে ছিল সকলের থেকে আলাদা। তার বোলিং, ব্যাটিং ও ফিল্ডিং ছিল চোখে পড়ার মতো।   তখন থেকেই ওর মধ্যে একটা জেদ ও স্বপ্ন ছিল, বড় কিছু করার। তাঁর সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আজ ও দেশের হয়ে খেলছে, টিভিতে ওর খেলা দেখছি এটা আমাদের বন্ধুদের জন্য কতটা গর্বের, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।

 

তারা বলেন, সাকলাইন প্রমাণ করেছে, চেষ্টা থাকলে মফস্বল থেকেও তারকা হওয়া যায়। সাকলাইনকে বরণ করতে আসা সৈয়দপুরের সিনিয়র ক্রিকেটার মো. মিন্টু, জায়েদীসহ অন্যান্য ক্রিকেটাররা জানান, যারা নিয়মিত অনুশীলন করেন, তাদের কাছে সাকলাইন এখন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। সে এখন আমাদের গর্ব। আগে ভাবতাম জাতীয় দলে খেলা অনেক দূরের স্বপ্ন। কিন্তু সাকলাইনের মত অধ্যবসায় থাকলে তা সম্ভব, আজ তা সাকলাইন প্রমাণ করেছে। সৈয়দপুরের মাটি থেকেও জাতীয় দলে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। তার এই অর্জন স্থানীয় ক্রিকেটারদের অনুশীলনে বাড়তি উৎসাহ দিচ্ছে।

 

এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে আবোপ্লত হয়ে আব্দুল গাফফার সাকলাইন বলেন,"জাতীয় দলের হয়ে খেলা গর্বের, কিন্তু দিন শেষে নিজ এলাকার মানুষের এই ভালোবাসা আমাকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে। ইমার্জিং এশিয়া কাপ শেষে নিজের শহরে ফিরে, চেনা মানুষদের কাছে যে ভালোবাসা পেলাম, তা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তিগুলোর একটি।

 

শহরের অফিসার্স কলোনী এলাকার বাসিন্দা সাকলাইন। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর শাহীন আকতার জানান, ছোটবেলা থেকেই সাকলাইন ছিল অত্যন্ত পরিশ্রমী। আজ তার এই সাফল্যে পুরো সৈয়দপুর গর্বিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামীতেও সাকলাইন তার পারফরম্যান্স দিয়ে লাল-সবুজের পতাকাকে আরও উঁচুতে তুলে ধরবেন।

 

উল্লেখ্য টেপ টেনিস থেকে উঠে আসা সাকলাইন জাতীয় লীগে রংপুর বিভাগের এবং ঢাকা লীগে গাজী গ্রুপের হয়ে খেলে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে সুযোগ করে নেন জাতীয় এ দলে। তিনি ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে নিজের জাত চেনান। এতেই সারাদেশে এক আইকনিক খেলোয়াড়ের পরিচিতি পান সাকলাইন।

পরে একটি আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে সাকলাইনকে তার নিজ বাসভবনে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানেও ভিড় জমান অসংখ্য ভক্ত ও শুভাকাঙ্খী।