
কালের গর্ভে বিলীন উলিপুরের মুন্সিবাড়ি
- Jan 12 2020 17:53
এম এস সাগর, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী উলিপুরের মুন্সীবাড়ি। ৩৯ একর আয়তন জুড়ে সব মিলিয়ে এর অস্তিত্ব রয়েছে চোখে পড়ার মত। চোখ ধাঁধানো বাড়িটির ভবনের ভেতরে ও বাইরে অপরুপ কারুকার্জ ও স্থাপত্য শৈলী। মোঘল স্থাপত্য শৈলীর সঙ্গে ব্রিটিশরীতির আদলে এটি নির্মিত। প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন সম্পর্কে নানা উপাখ্যান ও লোকগাথা প্রচলিত আছে।
তৎকালীন সময়ে কাসিম বাজার এস্টেটের সপ্তম জমিদার ছিলেন কৃষ্ণনাথ নন্দী। জমিদার কৃষ্ণনাথ নন্দী এক খুনের মামলায় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর বিষয়কে নিজের জন্য অবমাননাকর ও আত্মমর্যাদাহীন মনে করে বিগত ১৮৪৪ সালের ৩১ অক্টোবর নিজ বাসভবনে আত্মহত্যা করেন। এরপর তার স্ত্রী মহারানী স্বর্ণময়ী কাসিমবাজার এস্টেটের জমিদার হন। স্বর্ণময়ী ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী ও প্রজাদরদী জমিদার। তার অধীনে মুনসেফের চাকরি করতেন বিনোদী লাল। বিনোদী লাল বার্ষিক একশত টাকায় ধরণীবাড়ি এস্টেটের জোতদারী ভোগ করতেন। বর্তমান কালের সাক্ষী হয়ে যে অট্টালিকাটি দাঁড়িয়ে আছে আঠারো শতকে সেটি তৈরি করেন বিনোদি লালের পালক পুত্র শ্রী ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সী। ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সী ১৯৬০ সালে মারা যান। তার কোনো পুত্র সন্তান ছিল না।
ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সীর স্ত্রী আশলতা মুন্সীর বিহারীলাল নামে এক পালক পুত্র ছিল। বিহারীলাল ছিলেন ভবঘুরে, মাতাল এবং নির্লোভ ব্যক্তি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাইফুল হক তৎকালীন একটি এনজিও অফিসে চাকরিসূত্রে এখানে থাকতেন। এলাকার কয়েকজন বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, তিনি বিহারীলালের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নেন। সাইফুল পক্ষের দাবি তারা বাড়িটি কিনে নিয়েছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সি বিহারীলালকে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেননি, গ্রহণ করেছিলেন আশলতা। তাছাড়া ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সী তার সমস্ত সম্পত্তি স্ত্রীকে দেননি। তার স্ত্রী শুধু প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি নিয়ে সম্পতির অংশ থেকে দান-খয়রাত, পূজা-অর্চনা ও বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যয় করতে পারবেন। এভাবে উইল করে দিয়েছিলেন ব্রচেন্দ্রলাল মুন্সী। যেখানে সম্পত্তি বিক্রি করা আশলতার অধিকার ছিল না সেখানে তার পালকপুত্র পাওয়া প্রশ্নই ওঠে না। এরপর সরকার ও সাইফুল পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন মামলা চলার পর চলতি বছর সেই মামলার রায় হয়েছে মাত্র।
জন্মলগ্নে ৩৯ একর আয়তনের জায়গা থাকলেও, কালের বিবর্তনে এখন তার এক-তৃতীয়াংশও নেই। বর্তমানে বাড়িটির একটি কক্ষে ভূমি অফিস, আর একটিতে আছে অনেক পুরনো ভূমি-সংক্রান্ত মোটা মোটা খাতার ফাইলপত্র। বাকি কক্ষগুলো পরিত্যক্ত পড়ে আছে। সংস্কারের অভাবে একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে ভিজে যায় কক্ষের ভেতরের অংশ। যার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। ছাদের পানি পড়ার জন্য বাঘের মুখ ছিল একসময়, তা আজ প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় পাওয়া যায়। কারুকার্যখচিত দেয়াল আজ সংস্কারের অভাবে চাপা পড়ছে শেওলার নিচে। ভেতরে জঙ্গলে ভরা। যাতে শোভা পায় বড় বড় গেছো শামুক।
অবহেলা-অযত্ন ও স্বার্থপরতায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের একমাত্র ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী বিখ্যাত মুন্সীবাড়ি। এলাকাবাসীর দাবি, বাড়িটিকে সংস্কার করে ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষণ করে এক দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
মানবকণ্ঠ/আরবি
আরো সংবাদ
মুরাদনগরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত, আহত ১
- Jan 12 2020 17:53
সুনামগঞ্জে হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
- Jan 12 2020 17:53
ইসিতে ৩৩৮ ওসির বদলির তালিকা
- Jan 12 2020 17:53
সৈয়দপুরে মহিলা আওয়ামী লীগের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত
- Jan 12 2020 17:53
সর্বশেষ
Weather

- London, UK
13%
6.44 MPH
-
23° Sun, 3 July
-
26° Sun, 3 July